ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে মূল সমস্যা হলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। ইতালির রাজধানী রোমে দুই দেশের মধ্যে হওয়া বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়েই প্রধানত আলোচনা হয়েছে।
খবর সূত্রে জানা যায়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের কর্মকর্তারা পঞ্চম দফা বৈঠকে বসেছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হলে তেহরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে। তবে ইরানের তরফে জানানো হয়েছে, সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা হলে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এক বিবৃতিতে জানান, ‘চুক্তি করার জন্য কোনো রকেট বিজ্ঞান জানার প্রয়োজন নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতি পরিকল্পনা পরিচালক মাইকেল এন্টন। ওমানের মধ্যস্থতায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কারণ, তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্রে ওমান একটি নির্ভরযোগ্য দেশ হিসেবে পরিচিত।
আলোচনায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করার চেষ্টা চলছে, যার বিনিময়ে দেশটির উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ইরানের অর্থনীতিকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, যদি কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে তিনি ইরানের উপর বিমান হামলা চালানোর নির্দেশ দেবেন। অন্যদিকে, ইরানের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, তাঁদের কাছে মজুদ ইউরেনিয়াম যদি অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, ইরান ৩.৬৭% হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। পরবর্তীতে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং জানায়, ইরানের সকল প্রকার সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনা সফল হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘ইরান আলোচনার টেবিলে রয়েছে এবং তারা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত। আলোচনা এখনো চলছে।’
বৈঠকে একটি প্রস্তাব এসেছিল, যার মাধ্যমে ইরান তাদের দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে পারবে, তবে তাদের ইউরেনিয়ামের সরবরাহ বজায় থাকবে। এই বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকতে পারে। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের দেশের অভ্যন্তরেই সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। এর আগে ২০১০ সালেও এ ধরনের একটি প্রস্তাব উঠেছিল, যা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি।
এদিকে, ইসরায়েলও হুমকি দিয়েছে যে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে। যদি তারা মনে করে, তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এমনিতেই বেশ উত্তপ্ত।
আরাকচি সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে তেহরান এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েলের কোনো হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে, ইরানের অভ্যন্তরেও অস্থিরতা চলছে। নারীদের হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। এছাড়াও, দেশটির সরকার ভর্তুকিযুক্ত গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে, যা অতীতে দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।
এপ্রিল মাসে ইরানের মুদ্রা রিয়ালের বিনিময় মূল্য এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১০ লাখের বেশি হয়ে গিয়েছিল। তবে আলোচনার কারণে মুদ্রার মান কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তেহরান আশা করছে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে, কারণ মুদ্রার আরও অবমূল্যায়ন হলে অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস