আর্জেন্টিনায় বাড়ছে শিশুদের চেয়ে পোষা কুকুরের কদর।
বুয়েনস আইরেস, আর্জেন্টিনা – আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে এক ভিন্ন চিত্র। এখানে শিশুদের তুলনায় এখন পোষা কুকুরের সংখ্যা বেশি। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট এবং মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে।
খবর সূত্রে জানা যায়, বুয়েনস আইরেসের প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়িতে এখন কোনো না কোনো পোষা প্রাণী রয়েছে।
আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেশ কয়েক বছর ধরেই টালমাটাল। একদিকে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে কমছে মানুষের আয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক দম্পতি সন্তান ধারণের পরিবর্তে তাদের সঙ্গীরূপে বেছে নিচ্ছেন কুকুরকে।
২০১৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, বুয়েনস আইরেসে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার, যেখানে কুকুরের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লাখ।
কুকুরপ্রেমীদের এই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বিভিন্নভাবে। অনেকে তাদের প্রিয় কুকুরকে সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। তাদের জন্মদিন পালন করা হয়, পরানো হয় পছন্দের দলের জার্সি।
এমনকি তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে বিশেষ খাবার ও কেক। “বার্তো ক্যাফে”র মতো বেকারিগুলোতে এখন কুকুরের জন্য কেক পাওয়া যায়, যা একসময় হয়তো অনেকের কাছে কল্পনাতীত ছিল।
শুধু খাবার বা পোশাক নয়, পোষা কুকুরের জন্য বিউটি পার্লারের চাহিদাও বাড়ছে। সেখানে তাদের জন্য স্পা, পেডিকিউর এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় পরিষেবা উপলব্ধ।
“গুয়াও এক্সপেরিয়েন্স” নামের একটি পার্লারে কুকুরের সৌন্দর্যচর্চার জন্য প্রায় ১২০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হয়, যা একজন আর্জেন্টাইন নাগরিকের গড় মাসিক আয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশ।
মনোবিদরা বলছেন, মানুষের এই পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার কারণে পরিবারে পোষা প্রাণীর গুরুত্ব বাড়ছে। পোষা কুকুরগুলো এখন পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে, যা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নতুন সম্পর্ক তৈরি করছে।
এই পরিবর্তনের কারণে বুয়েনস আইরেসে গড়ে উঠছে পোষা প্রাণীদের জন্য হোটেল, বুটিক এবং এমনকি সমাধিস্থলও।
আর্জেন্টিনার এই প্রবণতা দেশটির আইনপ্রণেতাদেরও নজরে এসেছে। তারা শহরটিকে পোষা-বান্ধব করে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এর মধ্যে জনসাধারণের পরিবহনে পোষা প্রাণীদের প্রবেশাধিকার সহজ করার মতো বিষয়ও রয়েছে।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেইও পশুপ্রেমের একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার চারটি ইংরেজি মাস্টিফ কুকুর রয়েছে, যাদের তিনি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন।
এমনকি তিনি তার প্রয়াত কুকুরের স্মৃতিস্বরূপ তাদের ক্লোন করেছেন।
তবে অনেকে মনে করেন, শিশুদের তুলনায় পোষা প্রাণীর প্রতি এই অতি-আগ্রহ দেশের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগের কারণ। বুয়েনস আইরেসের ডেপুটি মেয়র ক্লারা মুজ্জিও বলেন, “যেখানে কম শিশু, সেই পৃথিবী ভালো নয়।”
আর্জেন্টিনার এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছুটা ভিন্ন। আমাদের দেশে কুকুর সাধারণত বাড়ির ভেতরের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয় না।
ধর্মীয় এবং সামাজিক কারণে অনেকের মধ্যে পোষা প্রাণী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থাকতে পারে। তবে, উন্নত বিশ্বে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পোষা প্রাণীর প্রতি এই ধরনের আগ্রহ বাড়ছে, যা বর্তমানে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস