কাপ্তাই প্রতিনিধি।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সাক্রাছড়ির বাসিন্দা অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা ক্রিক জলাশয়ে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পাদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাহাড়ের ঢালুতে ক্রিক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ করে ইতিমধ্যে অনেকই স্বাবলম্বী হয়েছে।
গত ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে সাক্রাছড়ির পাহাড়ের পাদদেশে উন্নয়নকৃত ক্রিকে কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের বাস্তবায়নে ক্রিক প্রদর্শনী মৎস্য খামার শুরু করে। এর আগে অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে উপজেলা মৎস্য অফিস হতে মাছের পোনা,খাদ্য সামগ্রী এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান।
কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য অফিস জানায়, মৎস্য চাষী অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার ক্রিক প্রদর্শনী মৎস্য খামারের প্যাকেজের নাম কার্প জাতীয় মাছের মিস্রচাষ। যেটি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে উপজেলা ওয়াগ্গা ইউনিয়ন সাক্রাছড়ি এলাকায় বাস্তবায়ন করা হয়।প্রদর্শনীর আয়তন ০.৪০ হেক্টর এবং সুফলভোগীর সংখ্যা ৮ জন।
মৎস্য চাষী অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পারিবারিক ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ছোট বেলা থেকেই মৎস্য চাষে আগ্রহী হন। পরে তিনি নিজ উদ্যোগে বাড়ির আঙিনায় পুকুর করে মাছ চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করেন। এরপর কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগীতা নিয়ে ক্রিক প্রদর্শনী মৎস্য খামার করা শুরু করেন। নিজের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে এবং সরকারি সহযোগীতায় তিনি মৎস্য চাষে নেমে যান। তার খামারে কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে রুই, কাতাল, মৃগেল, সিলভার ও গ্রাসকার্প জাতের মাছ চাষ হয়েছে।
ইতিমধ্যে মাছের আকার বড় হচ্ছে। খুব শিঘ্রই তিনি মাছ আহরণ শুরু করবেন বলে জানান। কিভাবে পরিচর্যা করেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৎস্য অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মৎস্য খামারে পরিচর্যা করেন। এছাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসারেরা প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমল জ্যোতি চাকমা জানান, পার্বত্য এলাকা দুর্গম। এখানে মাছ চাষের সুযোগ- সুবিধা কম। তবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে জলাশয় বা পুকুর তৈরি করলে দুর্গম এলাকার মানুষের মাঝে মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব।
তারই প্রেক্ষিতে কাপ্তাই উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে ক্রিক বা ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করে সুযোগ করে দিয়েছে। এই জলাশয় থেকে একদিকে মাছ চাষের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে খরা মৌসুমে সেচ হিসেবে পানি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। পাহাড় পর্বতের পানির অভাব পুরণেও এই ক্রিক জলাশয় ভূমিকা রাখছে। অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার তার পারিবারিক ভরণ পোষণ থেকে শুরু করে সংসার চলছে এই পেশার মাধ্যমে।
অমল তঞ্চঙ্গ্যা ছাড়া কাপ্তাইয়ের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে ৬টি ক্রিক প্রদর্শনী খামার রয়েছে। তারাও মাছ চাষে লাভবান হচ্ছে। ক্রিক মাছ চাষ শুরু করার পূর্বে চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং মৎস্য চাষ চলাকালীন সময়ে তাদের মৎস্য খামার পরিদর্শন ও বিভিন্ন কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। অমল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার ক্রিক চাষ পদ্ধতি দেখে আশপাশের অনেকেই এগিয়ে আসছে মাছ চাষ করার জন্য।