অনলাইন পরিচয় চুরি: প্রেমিকার ছদ্মবেশে অন্য নারীর সঙ্গে প্রতারণা, চাঞ্চল্যকর ঘটনা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর হাত ধরেই বাড়ছে অনলাইন বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কের বিস্তার।
তবে ইন্টারনেটের এই অবাধ দুনিয়ায়, বাড়ছে প্রতারণা ও পরিচয় চুরির মতো ঘটনাও। সম্প্রতি, এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একজন নারী, অনলাইনে পরিচিত হওয়া তাঁর প্রেমিকার দ্বারা পরিচয় জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।
পেশায় অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্যাশন স্নো’র (Patience Snow) সঙ্গে অনলাইনে পরিচয় হয় এক নারীর। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে, তাঁদের মধ্যে গভীর আলোচনা হতো এবং অনেক কিছুই মিলে যেত। তাঁদের রুচি, পছন্দের সিনেমা, বই, এমনকি কবিতা পর্যন্ত ছিল একইরকম।
কিন্তু, সম্পর্কের শুরুতেই কিছু সন্দেহজনক বিষয় নজরে আসে স্নোর। তিনি যখনই সামাজিক মাধ্যমে কোনো ছবি পোস্ট করতেন, তাঁর ওই বান্ধবী হুবহু একই ভঙ্গিতে তোলা ছবি কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্ট করতেন।
প্রথমে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি স্নো। কিন্তু, যখন তাঁর বান্ধবী, তাঁর শরীরের ট্যাটুর মতোই একইরকম দেখতে ট্যাটু এঁকে ছবি পোস্ট করলেন, তখন তাঁর সন্দেহ আরও বাড়ে।
স্নো যখন এর কারণ জানতে চান, তখন তাঁর বান্ধবী জানান, তিনি স্নোর ট্যাটুগুলো খুব পছন্দ করেন এবং সেগুলোর মতো নিজের শরীরে আঁকতে চান।
এর পাশাপাশি, স্নো তাঁর বান্ধবীর কথায় কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পান। তাঁর বান্ধবী শুরুতে জানিয়েছিলেন, তিনি একা থাকেন।
পরে স্নো জানতে পারেন, তিনি আসলে তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকেন। স্নো যখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে যান, তখন তাঁর বান্ধবী প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান অথবা দ্রুত ফোন রেখে দেন।
স্নো তখনও তাঁর বান্ধবীর উপর ভরসা রেখেছিলেন।
কিন্তু, ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়।
অন্য একজন নারী, যিনি ‘বাগ’ নামে পরিচিত, স্নোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানান যে, তিনি স্নোর সঙ্গে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কথা বলছেন।
‘বাগ’ স্নোর সাথে হওয়া কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট পাঠান, যেখানে দেখা যায়, স্নোর মতোই একটি অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর সাথে কথা বলা হয়েছে।
স্নো সঙ্গে সঙ্গে ‘বাগ’কে জানান, এই অ্যাকাউন্টটি তাঁর নয়।
এরপর তিনি জানতে চান, তাঁর সম্পর্কে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে কী ধরনের কথা বলা হয়েছে।
তিনি জানতে পারেন, ওই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ‘বাগ’কে ব্যক্তিগত ছবিও পাঠানো হয়েছে।
‘বাগ’ স্নোকে সেই ভুয়া অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট পাঠান।
সেখানে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টের ব্যবহারকারীর নাম স্নোর আসল অ্যাকাউন্টের নামের মতোই এবং প্রোফাইল ছবিতে স্নোর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
এমনকি, স্নোর বন্ধু এবং পরিচিতজনদেরও সেখানে ফলো করতে দেখা যায়।
স্নো এরপর তাঁর আসল এবং ব্যক্তিগত (যা শুধুমাত্র তাঁর বান্ধবী জানতেন) দুটি অ্যাকাউন্ট থেকেই সেই প্রোফাইলটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু, তিনি দেখেন, তাঁর দুটি অ্যাকাউন্টকেই ব্লক করা হয়েছে।
তখন স্নো বুঝতে পারেন, তাঁর সঙ্গে দিনের পর দিন ধরে কথা বলা নারীটি আসলে তাঁর পরিচয় ব্যবহার করে অন্য নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
তাঁর বান্ধবী, স্নোর ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে, তাঁদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
সন্দেহ দূর করতে স্নো, ভুয়া প্রোফাইল এবং তাঁর বান্ধবীর প্রোফাইলে লগ ইন করার চেষ্টা করেন।
তিনি দেখেন, দুটি প্রোফাইলের রিকভারি ইমেইল একই, যা তাঁর বান্ধবীর।
এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়ে যান, তাঁর বান্ধবীই ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করেছেন।
যখন তিনি তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন, প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন।
পরে অবশ্য তিনি সব স্বীকার করতে বাধ্য হন।
স্নো জানান, তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন, হতাশ হয়েছিলেন এবং নিজেকে বিশ্বাসঘাতিত মনে করেছিলেন।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অনলাইনে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে, ভালোভাবে যাচাই করা প্রয়োজন।
এছাড়া, অনলাইনে হয়রানি এবং পরিচয় চুরির মতো ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
তথ্য সূত্র: পিপল