শিরোনাম: শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং মাতৃত্ব: এল্লি সিমন্ডসের নতুন প্রামাণ্যচিত্রে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘এল্লি সিমন্ডস: শুড আই হ্যাভ চিলড্রেন?’ (Ellie Simmonds: Should I Have Children?) নামের একটি প্রামাণ্যচিত্রে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সন্তান ধারণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ব্রিটিশ সাঁতারু এল্লি সিমন্ডস এই তথ্যচিত্রে তাঁর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজে প্রচলিত ধারণাগুলো তুলে ধরেছেন।
ডকুমেন্টারিটিতে এল্লি সিমন্ডস দেখিয়েছেন, একজন নারী হিসেবে তাঁর সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা কঠিন হতে পারে। বিশেষভাবে সক্ষম মা-বাবার সন্তানের জন্ম দেওয়া এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পথ কেমন হবে, তা নিয়ে সমাজে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রামাণ্যচিত্রে এল্লি সিমন্ডস সেই বিষয়গুলোকেই তুলে ধরেছেন, যা দর্শকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
তথ্যচিত্রে এল্লি সিমন্ডস-এর দত্তক নেওয়ার পেছনের গল্পটিও তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর জন্মদাত্রী মা, এল্লিকে কেন দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই কঠিন পরিস্থিতিও এখানে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, সেই বিষয়টিও অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে, প্রামাণ্যচিত্রটিতে একটি বিশেষ মুহূর্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এল্লি সেখানে ডেভিড ও মেগান নামের এক দম্পতির সঙ্গে দেখা করেন, জানতে পারেন তাঁদের অনাগত সন্তানের ডাউন সিনড্রোম রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের দ্বিধা, ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা, এবং গর্ভপাতের মতো কঠিন সিদ্ধান্তগুলো দর্শককে নাড়া দেয়। এল্লি তাঁদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করেছেন, যা বিশেষভাবে মানবিক।
ডকুমেন্টারিটি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং সমাজের প্রচলিত ধারণাগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। একজন বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তির সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের ভীতি, উদ্বেগের প্রভাব কতখানি, সেই বিষয়গুলোও এখানে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও, সমালোচকদের মতে, এই প্রামাণ্যচিত্রটি সমাজের এই দিকগুলো আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে পারতো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার এবং তাঁদের জীবনযাত্রা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। তাঁদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করা, সমাজে তাঁদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা এবং তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের প্রামাণ্যচিত্র, যা প্রতিবন্ধকতা এবং মাতৃত্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
এল্লি সিমন্ডসের এই প্রামাণ্যচিত্রটি একদিকে যেমন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের গল্প বলে, তেমনই বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জীবন এবং তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও নতুন করে ভাবতে শেখায়। নিঃসন্দেহে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আমাদের সমাজে আলোচনা শুরু করতে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান