সুস্থ জীবন লাভের উপায়: বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
আমরা সবাই দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কাটাতে চাই। নব্বই বছর বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত জীবন কাটানো কার না ভালো লাগে?
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক, ডাঃ এরিক টপোল, স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তাঁর গবেষণার ভিত্তিতে, দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ডাঃ টপোল ‘সুপার এজারস’ (Super Agers) নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই সুপার এজারস-রা হলেন সেই ব্যক্তি, যাঁরা সাধারণত ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্নায়ু-সংক্রান্ত রোগ (neurodegenerative disease) ছাড়াই ৮০ বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত সুস্থ জীবন যাপন করেন।
তাঁর গবেষণায়, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব, এমনটাই উঠে এসেছে।
ডাঃ টপোলের মতে, সুস্থ জীবনের জন্য জিনগত কারণের চেয়ে জীবনযাত্রার ধরন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর নতুন বই, “সুপার এজারস: অ্যান এভিডেন্স-বেসড অ্যাপ্রোচ টু লঞ্জিভিটি” (Super Agers: An Evidence-Based Approach to Longevity) – তে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তাঁর মতে, খাদ্য, ব্যায়াম এবং ঘুমের মতো বিষয়গুলো সুস্থ জীবনের জন্য খুবই জরুরি।
ডাঃ টপোল নিজে এই বিষয়গুলো অনুসরণ করেন। তিনি এখন ৭০-এর কোঠায়।
তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
ব্যায়াম:
ডাঃ টপোলের মতে, সুস্থ জীবনের জন্য ব্যায়াম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আগে শুধু অ্যারোবিক ব্যায়াম করতেন, কিন্তু এখন ব্যালান্স ট্রেনিং এবং স্ট্রেন্থ ট্রেনিংও করেন।
তাঁর মতে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর যেমন শক্তিশালী হয়, তেমনি ভালো ঘুমও হয়। হাঁটা, দৌড়ানো, অথবা হালকা কিছু ব্যায়াম দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
ঘুম:
ডাঃ টপোলের মতে, পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। তিনি ঘুমের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ঘুমের সময় এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেছেন।
রাতে ভারী খাবার খাওয়া বা দেরিতে ব্যায়াম করা ঘুমের জন্য ভালো নয়। ঘুমের সময় নিয়মিত করাটাও খুব জরুরি।
খাবার:
ডাঃ টপোল দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করছেন। তিনি ৪০ বছর ধরে লাল মাংস খান না এবং মাছ খান।
তাঁর মতে, উদ্ভিজ্জ খাবার, যা যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করে, স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য ভালো। প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultraprocessed foods) শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তাই এগুলো খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
ডাঃ টপোল দৈনিক প্রায় ৯০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করেন, যা বাদাম, শিম এবং মাছ থেকে আসে। তিনি প্রতিদিন সালাদ খান।
অন্যান্য বিষয়:
ডাঃ টপোল সাপ্লিমেন্ট এবং ভিটামিন খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, যাদের কোনো বিশেষ ভিটামিনের অভাব রয়েছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণও সীমিত রাখতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া উপকারী।
ডাঃ টপোলের মতে, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার সঠিক সময় হলো ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়স। তবে, ৭০ বা ৮০ বছর বয়সে শুরু করলেও সুস্থ জীবন পাওয়া সম্ভব।
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য, নিজের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা দরকার। তাই, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন