ফ্রান্সের এক প্রাক্তন সার্জনকে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কুড়ি বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ৭৪ বছর বয়সী জোয়েল লে স্কোয়ারনেক নামের ওই ব্যক্তি কয়েক দশক ধরে প্রায় ৩০০ জনের বেশি শিশুকে নিগ্রহ করেছেন।
ফরাসি আদালতের ইতিহাসে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের এটি একটি বৃহত্তম মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলের ভানেস শহরে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিনি শিশুদের ওপর এই জঘন্য অপরাধগুলো করেছেন।
অভিযুক্ত নিজে তাঁর অপরাধ স্বীকার করেছেন।
**অভিযোগের বিবরণ**
অভিযোগ অনুযায়ী, শিশুদের অস্ত্রোপচার অথবা অ্যানেস্থেশিয়ার (anesthesia) প্রভাবে অচেতন থাকার সময়ে তিনি যৌন নির্যাতন চালাতেন। বিবিসির (BBC) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার অনেক শিশুরই সেই সময়ের স্মৃতি নেই।
আদালতে জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অভিযুক্ত তাঁর ডায়েরিতে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করতেন। পুলিশের হাতে আসা সেই ডায়েরিগুলোই মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছে।
ডায়েরিতে তিনি একাধিকবার নিজেকে ‘শিশু যৌন নিপীড়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও, শিশুদের অশ্লীল ছবি এবং অন্যান্য আপত্তিকর সামগ্রীও তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
**আগের অপরাধ এবং প্রতিক্রিয়া**
জোয়েল লে স্কোয়ারনেকের বিরুদ্ধে এর আগেও ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। ২০২০ সালে এক তরুণ প্রতিবেশীকে ধর্ষণ এবং দুই ভাগ্নি ও আরও এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের দায়ে তাঁর ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল।
নতুন করে পাওয়া কারাদণ্ডের মেয়াদ আগেরটির সঙ্গে যুক্ত হবে।
ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার জন্য ফরাসি চিকিৎসা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেক দেরি হয়েছে।
এমনকি ২০০৫ সালে শিশু পর্নোগ্রাফি (child pornography) রাখার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পরেও তিনি স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের আইনজীবী ফ্রান্সেসকা সাত্তা (Francesca Satta) জানান, “এই ব্যক্তির অপরাধ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল একটি দুর্বল ব্যবস্থা।”
এই ঘটনার পরে ফ্রান্সের ন্যাশনাল অর্ডার অফ ডক্টরস (National Order of Doctors) লে স্কোয়ারনেকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে।
তারা এই ঘটনার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, “চিকিৎসক হিসেবে তাঁর কাজ করার সুযোগ পাওয়া উচিত হয়নি।”
যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে নিকটস্থ সহায়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। অথবা, আপনার এলাকার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
তথ্য সূত্র: পিপল