শিল্পকলার জগতে পরিচিত শিল্পী র্যাচেল হোয়াইটরিডের নতুন প্রদর্শনী, যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের গভীর ক্ষতগুলো এক নতুন রূপে উন্মোচিত হয়েছে। ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট সাসেক্সের গুডউড আর্ট ফাউন্ডেশনে এই প্রদর্শনীটি আগামী ২রা নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
হোয়াইটরিডের শিল্পকর্ম মূলত পরিচিত তার ভিন্ন ধরনের নির্মাণশৈলীর জন্য। সাধারণ দৃশ্যমান বস্তু, যেমন—ঘরের ভেতরের অংশ, সিঁড়ি, এমনকি সমাধির টেবিল—এসব কিছুই তিনি কংক্রিট বা অন্য কোনো মাধ্যমে তৈরি করেন। তাঁর কাজে স্মৃতি, শোক, এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতা ফুটিয়ে তোলা হয়।
প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ডাউন অ্যান্ড আপ’। এটি কংক্রিট দিয়ে তৈরি একটি বিশাল আকারের সিঁড়ি, যা প্রকৃতির সবুজ প্রান্তরে স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশেই রয়েছে ‘আনটাইটেলড (পেয়ার)’ নামের শিল্পকর্মটি, যেখানে শ্বেত পাথরের মতো দেখতে দুটি আয়তক্ষেত্রাকার ফলক স্থাপন করা হয়েছে, যা অনেকটা সমাধির টেবিলের মতো। শিল্পী যেন মৃত্যুর নীরবতাকে এখানে রূপ দিয়েছেন।
হোয়াইটরিডের কাজের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—তিনি সাধারণ জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা গভীর অর্থ খুঁজে বের করেন। তাঁর বিখ্যাত কাজ ‘হাউস’, যা ১৯৯৩ সালে টার্নার পুরস্কার জিতেছিল, সেটিও একসময় খোলা আকাশের নিচে স্থাপন করা হয়েছিল। যদিও সেটি এখন আর নেই, কিন্তু শিল্পীর কাজ এখনো মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে।
প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে ‘ডেট্যাচড টু’ নামের একটি কাজ, যা একটি পরিত্যক্ত শেডের কংক্রিট সংস্করণ। এর চারপাশে প্রকৃতির বিস্তার, যা একাকীত্ব ও সময়ের পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা যায়। এছাড়াও, ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি কুঁড়েঘরের পুনর্গঠন ‘ডপেলগ্যাঙ্গার’ দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
হোয়াইটরিডের ছবিতে মানুষের জীবনের দুঃখ, বেদনা এবং প্রকৃতির সঙ্গে এর সম্পর্ক গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, শিল্পী বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসাবশেষের ছবি তুলেছেন, যা আমাদের জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা ও প্রকৃতির পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এই প্রদর্শনীতে হোয়াইটরিডের কাজগুলো একদিকে যেমন আধুনিক, তেমনই গভীর আবেগময়। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য ও জীবনের অমোঘ সত্যের মুখোমুখি করে তোলে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ইতালির বার্গামো শহরে তিনি যে শিল্পকর্ম তৈরি করেছিলেন, তাও এই প্রদর্শনীর একটি অংশ।
র্যাচেল হোয়াইটরিডের এই প্রদর্শনী শিল্পপ্রেমীদের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। এখানে শিল্প, প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনের গভীরতা এক সুরে মিলেমিশে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: The Guardian