মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চাশের দশকে সংঘটিত ‘ম্যাকার্থিবাদ’-এর ছায়া আজও যেন স্পষ্ট। সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা – এই বিষয়গুলো নিয়ে নির্মিত একটি বিখ্যাত নাটক, ‘গুড নাইট, অ্যান্ড গুড লাক’। জর্জ ক্লুনি অভিনীত এই নাটকটি বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
নাটকটি মূলত সিবিএস-এর সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. মুরোর চরিত্রকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। মুরো, যিনি একসময় ‘সম্প্রচার জগতের মেরুদণ্ড’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সত্য প্রকাশে ছিলেন অবিচল। তিনি ‘সি ইট নাও’ নামক একটি অনুষ্ঠানে গভীর অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন তৈরি করতেন, যেখানে চলচ্চিত্রের ক্লিপ ব্যবহার করা হতো এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হতো।
পঞ্চাশের দশকে, কমিউনিস্ট ভীতি ছড়িয়ে পড়লে সিনেটর জোসেফ ম্যাকার্থি সরকারের ভেতরে কমিউনিস্টদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলেন। এর জেরে অনেকের সম্মানহানি ঘটেছিল। মুরো এবং তাঁর সহকর্মী ফ্রেড ফ্রেন্ডলি এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁরা একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ বিষয়ে আলোকপাত করতে চেয়েছিলেন। সেই সময়ে, বিমান বাহিনীর রিজার্ভ অফিসার মিলো রাডুলোভিচের ঘটনা তাঁদের অনুসন্ধানের বিষয় হয়। রাডুলোভিচকে তাঁর আত্মীয়দের কমিউনিস্ট সংযোগের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। মুরোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং এর ফলস্বরূপ বিমান বাহিনী তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
নাটকটিতে ম্যাকার্থির এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে মুরোর সাহসী পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। এই ঘটনার সূত্র ধরেই, জর্জ ক্লুনি ২০০৫ সালে এটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। গত বছর এটি ব্রডওয়ে মঞ্চে নাটক হিসেবে ফিরে আসে, যেখানে ক্লুনি নিজেই মুরোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এখানেই বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ট্রাম্পও সংবাদ মাধ্যমকে তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং বিভিন্নভাবে তাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করেছেন। ট্রাম্পের শাসনামলে অনেক সাংবাদিককে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসনের একজন সাবেক কর্মকর্তা, যিনি প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে একটি বই লিখেছিলেন, তাঁকেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
আশির দশকে, সিবিএস-এর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম প্যালির সঙ্গে মুরোর সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, কারণ কর্পোরেট স্বার্থ এবং রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আজও দেখা যায়, যখন একটি কর্পোরেট সংস্থা, যারা ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
নাটকটিতে, মুরো সাংবাদিক এবং কর্পোরেট কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর সেই প্রশ্নগুলো আজও প্রাসঙ্গিক। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সত্য প্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য এই ধরনের আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন