মায়ের ‘দিদা হওয়ার অভিজ্ঞতা’ চেয়ে মেয়ের সঙ্গে বিবাদ।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক নারীর অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে, যেখানে তিনি তার মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্যে জড়িয়েছেন। মা তার নাতীর সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চান এবং নাতীর দেখাশোনার ক্ষেত্রে মেয়ের স্বাধীনতাকে যেন খর্ব করতে চাইছেন। বিষয়টি নিয়ে ওই নারী বেশ বিব্রত এবং দ্বিধায় ভুগছেন।
জানা যায়, ওই নারীর বয়স ২৭ বছর এবং তার সন্তানের বয়স ছয় মাস। মা-মেয়ের এই সমস্যার সূত্রপাত হয় মেয়ের সন্তান জন্ম নেওয়ার পরেই। মা সবসময় নাতীর প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাতেন এবং নিজেকে একজন পারফেক্ট ‘দিদা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন। এমনকি মেয়ের সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই তিনি তার বাড়িতে একটি শিশুর ঘর তৈরি করেন এবং প্রায়ই বলতেন, ছুটির দিনগুলোতে নাতি তার কাছেই থাকবে।
ওই নারী জানান, তার মা সবসময় তার সন্তানের দেখাশোনার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি যদি শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ান, তাহলে মা বলেন তিনি তার ছেলেকে “আদর দিয়ে নষ্ট” করছেন। আবার, তিনি যদি শিশুকে মায়ের কাছে নিয়ে যেতে দেরি করেন, তাহলে মা অভিযোগ করেন যে তিনি নাতীকে তার থেকে দূরে রাখছেন। এমনকী, কোনো ঘোষণা ছাড়াই তিনি তাদের বাড়িতে চলে আসেন এবং নাতীকে একা নিতে চান, যা ওই নারীর ভালো লাগে না।
সম্প্রতি পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়টি চরম আকার ধারণ করে। ওই নারী যখন তার সন্তানকে কোলে নিয়ে ছিলেন, তখন তার মা হঠাৎ করে তার কাছ থেকে সন্তানকে নিতে চান এবং বলেন, “আমার একটু বিশ্রাম দরকার।” উত্তরে তিনি বলেন, “মা, আমার বিশ্রামের প্রয়োজন নেই, আমি সামলাতে পারব।” এতে তার মা খুব আহত হন এবং এরপর থেকে তার সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
এরপর মা তাকে একটি দীর্ঘ বার্তা পাঠান, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে মেয়ে তাকে ‘দিদা হওয়ার অভিজ্ঞতা’ থেকে বঞ্চিত করছেন এবং তার সঙ্গে অপরিচিতের মতো আচরণ করছেন। এমনকি, তার বাবা এবং ভাইবোনরাও এখন তাকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার কথা বলছেন, কারণ তার মা নাতিকে খুব ভালোবাসেন।
এই পরিস্থিতিতে ওই নারী জানতে চান, তিনি কি খুব কঠোর হচ্ছেন? তিনি চান না মাকে দূরে সরিয়ে দিতে, কিন্তু একইসাথে চান না সবসময় সমালোচিত হতে এবং সন্তানের প্রতি অধিকার হারাতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা প্রয়োজন। মায়ের এই অতিরিক্ত আগ্রহ স্বাভাবিক, তবে নাতীর প্রতি মায়ের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ যেন সন্তানের মা-বাবার অধিকারকে খর্ব না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানের মা হিসেবে মেয়েরও তার সন্তানের প্রতি নিজস্ব কিছু অধিকার রয়েছে। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা যেতে পারে, যেখানে মা তার নাতীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন, আবার মেয়ের স্বাধীনতাও বজায় থাকবে।
এই ঘটনাটি অনলাইনে প্রকাশিত একটি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা হয়েছে, যা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নয়। বাংলাদেশের পরিবারগুলোতে এমন পরিস্থিতি প্রায়ই দেখা যায়। এখানে পারিবারিক সম্পর্ক এবং প্রবীণদের প্রতি সম্মান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাধান খুঁজে বের করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: পিপল