গ্লোরিয়া এস্তেফান: কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সঙ্গীতের পথে
লাতিন পপ-এর রানী খ্যাত গ্লোরিয়া এস্তেফান, যিনি সঙ্গীতের জগতে পাঁচ দশক ধরে বিচরণ করছেন, তাঁর জীবনের এক কঠিন মুহূর্ত নিয়ে কথা বলেছেন।
প্রায় ৩৫ বছর আগে, ১৯৯০ সালের ২০শে মার্চ, তুষারপাতের মধ্যে পেনসিলভানিয়ার একটি হাইওয়েতে তাঁর ট্যুর বাসের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এই দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন, ভেঙে যায় তাঁর কোমর।
তবে সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি আজও তাঁকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘পিপল’ ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৬৭ বছর বয়সী গ্লোরিয়া এস্তেফান তাঁর সঙ্গীত জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করেছেন তিনি। আগে সবকিছুকে যেভাবে দেখতেন, এখন সেগুলোর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলে গেছে।
জীবনের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের সঙ্গে সংযোগ এবং কৃতজ্ঞতাবোধ—এগুলো তাঁর কণ্ঠের মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, “আমি চাই না সেই সময়ের মধ্যে আবার ফিরে যেতে, কিন্তু আমি একে পরিবর্তনও করতে চাই না।”
দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমি তখন ভেবেছিলাম, হয়তো এই কারণেই আমার এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া। হয়তো আমি অন্যদের জন্য একটি উদাহরণ হতে পারি, কিভাবে জীবনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হয়।”
নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকিয়ে গ্লোরিয়া এস্তেফান জানান, যদি তিনি তাঁর তরুণ বয়সে ফিরতে পারতেন, তাহলে একটি কথাই বলতেন— ‘বর্তমানকে উপভোগ করো’।
কারণ সময় খুব দ্রুত চলে যায় এবং জীবনের অনেক কিছুই তাঁর কাছে এখন একটা ধোঁয়াশার মতো। ক্যারিয়ারের ব্যস্ততার মধ্যে অনেক সময় তিনি দিশেহারা হয়ে যেতেন। তাই তিনি নিজেকে বলতেন, “শান্ত হও, সবকিছু এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধু এখানে থাকো, সঙ্গীত উপভোগ করো… পারফেক্ট হওয়ার চিন্তা করো না।”
গ্লোরিয়া এস্তেফানের নতুন অ্যালবাম ‘রাইসেস’ (Raíces), যার অর্থ ‘শিকড়’, মুক্তি পেয়েছে ২৯শে মে। এই অ্যালবামের গানগুলো মূলত লিখেছেন তাঁর স্বামী এমিলিও এস্তেফান।
গ্লোরিয়া জানান, অ্যালবামটি একটি ব্যক্তিগত ভালোবাসার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এবং এতে অনেক ভালোবাসার গান রয়েছে। এমিলিও তাঁর জন্য একটি প্রেমের গান লিখেছিলেন, যা শুনে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন।
‘রাইসেস’ অ্যালবামটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা সবাই আমাদের শিকড়ের সঙ্গে বাঁধা এবং যারা আমাদের ভালোবাসে, তাদের সবসময় আমাদের সঙ্গে পাওয়া যায়। আমাদের সংস্কৃতিকে উদযাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটিই আমাদের স্বরূপ তৈরি করে।
গ্লোরিয়া এস্তেফানের সঙ্গীত জীবন এবং তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধির এই গল্প, আমাদের সমাজে অনেক মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জীবনের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এই মনোভাব, আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয়।
তথ্য সূত্র: পিপল