সেলিন সং-এর নতুন ছবি ‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’-এ নজরাণা নোরার: ভালোবাসার গল্পে নস্টালজিয়া।
ভালোবাসার গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে নورا এফরনের (Nora Ephron) জুড়ি মেলা ভার। তাঁর সিনেমার সংলাপ থেকে শুরু করে চরিত্র চিত্রণ—সবকিছুতেই দর্শকদের মন জয় করার ক্ষমতা ছিল।
এবার সেই নোরার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছবি বানিয়েছেন পরিচালক সেলিন সং (Celine Song)। তাঁর নতুন ছবি ‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’-এ (Materialists) নোরার সিনেমার ছোঁয়া রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্রিস ইভান্স, পেদ্রো প্যাস্কাল এবং ডাকোটা জনসন।
সেলিন সংয়ের মতে, নোরার ছবিগুলোই ‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’-এর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ‘হোন হ্যারি মেট স্যালি…’ (When Harry Met Sally…), ‘ইউ’ভ গট মেইল’ (You’ve Got Mail)-এর মতো ছবিগুলোর দৃশ্য, সংলাপ এমনকি চরিত্রগুলোর মধ্যেও নোরার প্রভাব রয়েছে।
সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছে লুসি নামের এক সফল ম্যাচমেকারকে (matchmaker) কেন্দ্র করে। পেশাগত জীবনে সফল হলেও, ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো তার কাছে বেশ জটিল হয়ে ওঠে।
গল্পের মোড় আসে যখন লুসি, হ্যারি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়। একই রাতে প্রাক্তন প্রেমিক জনের সঙ্গেও তার দেখা হয়। এরপর লুসির জীবনে প্রেম এবং ক্যারিয়ারের টানাপোড়েন শুরু হয়।
‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’-এর গল্প বলার ধরনটি নোরার ছবি থেকে অনুপ্রাণিত। ‘হোন হ্যারি মেট স্যালি…’-এর কয়েকটি দৃশ্যের মাধ্যমে সেলিন সং, সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
ছবিতে কিছু ক্লায়েন্ট ইন্টারভিউয়ের দৃশ্য রয়েছে, যেখানে তারা তাদের সঙ্গীর মধ্যে কী কী গুণ দেখতে চান, সেই বিষয়ে কথা বলছেন।
সেলিন সং-এর মতে, ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’-এর (Pride and Prejudice) মতো ছবিতে সম্পর্কের টানাপোড়েন যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা ‘ম্যাটেরিয়ালিস্টস’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
লুসি এবং জনের সম্পর্কের গভীরতা ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি সাহায্য করেছে। ছবিতে তাদের অতীতের কিছু স্মৃতি দেখানো হয়েছে, যেখানে তারা একে অপরের প্রয়োজনগুলো ভুল বোঝে।
নোরার সিনেমাগুলোতে খাবারের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকে। সেলিনও তাঁর ছবিতে এই বিষয়টি রেখেছেন।
যেমন, ‘ইউ’ভ গট মেইল’-এ ক্যাথলিনকে (Kathleen) দেখা যায় জো-কে (Joe) ক্যাভিয়ার (caviar) বেশি ব্যবহার করার জন্য বকা দিতে।
ছবিতে লুসির একটি বিশেষ পানীয় পছন্দের দৃশ্য রয়েছে। হ্যারি যখন তার জন্য পানীয় আনতে চান, তখন জন এসে হাজির হয় এবং লুসির পছন্দের পানীয়টি তার হাতে তুলে দেয়।
নোরার ছবিগুলোতে সংলাপের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সেলিন সংও তাঁর ছবিতে সেই ধারা বজায় রেখেছেন।
ছবিতে লুসি ধনী হতে চায়, আবার শেষে সে এমন একজনকে বিয়ে করতে চায় যে দরিদ্র। সিনেমার শেষে এমন একটি সংলাপ রয়েছে, যা দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে— ‘একটা খারাপ আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে কেমন লাগবে?’
সেলিন সং-এর মতে, নোরার সিনেমায় পুরুষ চরিত্রদেরও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি মনে করেন, নোরার ছবিগুলোতে নারীদের মতো পুরুষদেরও দুর্বলতা এবং ভালোবাসার জন্য লড়াই করতে দেখা যায়।
ছবিতে নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন স্থানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নোরার ছবিতে যেমন শহরের অলিগলি, সাধারণ মানুষের জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, এখানেও তেমনটা দেখা যায়।
জন নামের এক অভিনেতা তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে একটি পুরনো ফ্ল্যাটে (flat) থাকে, আবার হ্যারি নামের একজন সফল ব্রোকার একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে (apartment) বাস করে।
ছবিটির শেষ দৃশ্য সেন্ট্রাল পার্কে (Central Park) ধারণ করা হয়েছে। সেলিনের মতে, নোরার ছবিতে এই ধরনের দৃশ্যগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: পিপল