ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইল মনে করে, ইরান দ্রুত পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের সামরিক অভিযান জরুরি ছিল।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে এখনো কয়েক বছর সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
গত সপ্তাহে ইসরাইল ইরানের কিছু পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরাইলের দাবি ছিল, পরমাণু অস্ত্র তৈরির দৌড়ে ইরানকে থামানোই এই অভিযানের উদ্দেশ্য।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ধারণা, ইসরাইলের হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে হয়তো কয়েক মাসের বেশি ক্ষতি হয়নি। এমনকি ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত ফরদো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি এখনো অক্ষত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্রের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
তবে ইসরাইলের কর্মকর্তারা এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত নন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে তথ্য বিনিময় করেছেন, তাতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ইরান গোপনে ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র তৈরির উপযোগী করার চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইরান বর্তমানে অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পর্যায়ে ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা দিয়ে তারা অন্তত নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।
যদিও, ইরানের জন্য আসল চ্যালেঞ্জ হলো, দ্রুত বোমা তৈরি করা নয়, বরং তা নিক্ষেপ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করা।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত সরাসরি এই সংঘাতে জড়িত হতে চায়নি। তবে তারা জানিয়েছে, ইসরাইলকে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করতে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এর মধ্যে মাটির নিচে থাকা স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার জন্য বিশেষ বোমা এবং বি-২ বোমারু বিমানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের এই সামরিক অভিযানের কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এমন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে যে, এই পরিস্থিতিতে ইরান হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করেন, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেও এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে ইরান জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো আলোচনা করবে না।
ইসরাইলও তাদের অভিযান বন্ধ করার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, তেলের দামের ওপর এর একটি বড় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রার ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন