ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে বিশ্ব বাজারে তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা নতুন কিছু নয়, তবে এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
বিশেষ করে, হরমুজ প্রণালী, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহনের পথ, সেখানে যদি কোনো অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে।
হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থল। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেলের বেশি তেল এই পথ দিয়ে পরিবহন করা হয়।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA)-এর মতে, এই প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমুজ প্রণালীতে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
এর কারণ হলো, মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ কমে যাবে, যা দাম বাড়িয়ে দেবে।
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। গত শুক্রবার তেলের দাম বাড়লেও, সোমবার তা সামান্য কমেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি এখনো গুরুতর এবং যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। রাপিডান এনার্জির প্রেসিডেন্ট বব ম্যাকনালি মনে করেন, বাজারে তেলের দামের যে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, তা আসলে উদ্বেগের কারণ।
তাঁর মতে, পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, তেলের দাম বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম—সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়তে পারে।
সরকার যদি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভর্তুকি দেয়, তাহলে বাজেট ঘাটতি বাড়তে পারে।
অতীতেও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংঘাতের কারণে তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল শোধনাগার ‘আরামকো’র উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলস্বরূপ তেলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পক্ষ থেকে যদি তেল শোধনাগার বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়, তাহলে সরবরাহ আরও কমে যাবে, যা দাম বাড়াতে সহায়ক হবে।
পেপারডাইন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড অ্যাকোমাজ্জো মনে করেন, হরমুজ প্রণালীর পরিস্থিতি এখনো একটি বড় উদ্বেগের কারণ। তাঁর মতে, বাজার এখনো ধরে নিয়েছে যে এই সংঘাতের বিস্তার ঘটবে না।
তবে পরিস্থিতি যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। তাই, সরকারের উচিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে দেশের অর্থনীতিকে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন