বৈশ্বিক অস্থিরতার এই সময়ে, প্রস্তুতি নিচ্ছেন বামপন্থীরাও: যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে দুর্যোগ মোকাবিলার নতুন ধারা
বিশ্বজুড়ে যখন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হচ্ছে, তখন নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক মানুষ। এতদিন এই প্রস্তুতি বা ‘প্রিপেয়ার্ডনেস’-এর ধারণাটি রক্ষণশীলদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও, এখন বামপন্থী এবং উদারনৈতিকদের মধ্যেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
খবরটি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সূত্র থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘প্রিপেয়ার্ডনেস’-এর ধারণাটি মূলত আসে ১৯৫০ এর দশকে, যখন পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ছিল চরমে। সত্তরের দশকে জন্ম নেয় ‘সারভাইভালিস্ট’ আন্দোলন, যা পরবর্তীতে চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিতর্কিত হয়।
তবে বর্তমানে, জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক ভাঙনের আশঙ্কায় বামপন্থী এবং উদারনৈতিকরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তাদের প্রস্তুতিতে কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের রক্ষণশীল প্রতিপক্ষের থেকে একটি প্রধান পার্থক্য।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের বামপন্থী ‘প্রিপার’দের মতে, তারা কেবল ব্যক্তিগতভাবে টিকে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন না, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
তাদের মতে, সরকার দুর্যোগের সময় পর্যাপ্ত সাহায্য করতে ব্যর্থ হতে পারে। তাই তারা নিজেরা এবং তাদের কমিউনিটিকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে তারা খাদ্য, জল, জরুরি সরঞ্জাম এবং কিছু ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রও মজুত করছেন।
ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা এরিক শোনকুইলার ২০১৬ সালের নির্বাচনের পর তার ব্যাকপ্যাকটি পরীক্ষা করে জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলায় এটি আমার একটি সম্পদ হতে পারে।” মার্গারেট কিলজয় নামের একজন নারী, যিনি একটি পডকাস্টও চালান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য ব্যবস্থার সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কথা শুনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তিনি খাদ্য, জল এবং জরুরি সরঞ্জাম সংগ্রহ করা শুরু করেন।
বামপন্থী প্রিপারদের মতে, তাদের প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য হলো একটি বিপর্যয়পূর্ণ পরিস্থিতিতে অন্যদের সাহায্য করা। তারা মনে করেন, একা একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়ে টিকে থাকার চেয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রিপারদের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন হতে পারে। এদের মধ্যে বামপন্থীদের সংখ্যা এখনো কম হলেও, এই ধারাটি ধীরে ধীরে বাড়ছে।
বিভিন্ন দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক বামপন্থী মানুষ এখন তাদের জীবনযাত্রায় প্রস্তুতি যুক্ত করছেন।
বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধসের মতো ঘটনাগুলো এখানে জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তুতি-সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশের মানুষ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নতুন কিছু ধারণা পেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি, খাদ্য ও জরুরি সরঞ্জামের মজুত এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলার ধারণাগুলো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে, বর্তমান বিশ্বে দুর্যোগ এবং অনিশ্চয়তা বাড়ছে। তাই, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক—উভয় পর্যায়েই প্রস্তুতি নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন