নেব্রাস্কায় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অভিযানে পরিবার বিচ্ছিন্ন, আতঙ্কে শ্রমিক সমাজ।
যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের এক অভিযানে ৭০ জনের বেশি শ্রমিককে আটকের ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে ওমাহা শহরের একটি মাংস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে এই অভিযান চালানো হয়। এই ঘটনার জেরে শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোক এবং আতঙ্কের ছায়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে গ্লেন ভ্যালি ফুডস নামক মাংস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে অভিযান চালায় আইস (ICE) সদস্যরা। অভিযানে আটককৃতদের মধ্যে অনেকের ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা, অবৈধভাবে পুনরায় প্রবেশ, অথবা সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর ব্যবহারের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে।
আটকের শিকার হওয়াদের একজন হলেন রিনা সালাদোর মা, যিনি ২৫ বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছিলেন। রিনা জানান, তার মা কখনো কোনো ট্রাফিক আইনও ভাঙেননি। ঘটনার দিন, রিনা কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি পাওয়ার খবর পান। আনন্দের মধ্যেই মায়ের আটকের খবর তার জীবনে গভীর শোক নিয়ে আসে।
আরেকজন ভুক্তভোগী হলেন ওলগা লরেন্সো পালমা। তার স্বামীকেও এই অভিযানে আটক করা হয় এবং পরে তাকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়। ওলগা জানান, তার স্বামী দুই বছর ধরে ওই কারখানায় কাজ করতেন। এই ঘটনার পর তাদের এক বছর বয়সী শিশুটি বাবাকে খুঁজছে, অন্যদিকে ছয় বছর বয়সী মেয়েটি বাবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছে।
গ্লেন ভ্যালি ফুডসের প্রেসিডেন্ট চ্যাড হার্টম্যান জানান, কোম্পানি ই-ভেরিফাই সিস্টেম ব্যবহার করে শ্রমিকদের কাজের যোগ্যতা যাচাই করত। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের অভিযানের জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে, স্থানীয় মেয়র জানান, এই অভিযান “বিশৃঙ্খলা” তৈরি করেছে। জানা গেছে, অভিযানের পর অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছিল। এমনকি কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আইনজীবীরা জানান, আটককৃতদের মধ্যে ৬৩ জনকে নেব্রাস্কার নর্থ প্লেটে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে অনেকের সাথে আইনজীবীদের যোগাযোগ করতেও সমস্যা হচ্ছে, যা তাদের অধিকারের প্রতি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এই ঘটনার জেরে স্থানীয় হিস্পানিক সম্প্রদায়ে গভীর ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতেও সমস্যায় পড়ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এমন পরিস্থিতিতে, এই ধরনের অভিযানগুলো শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পর, শ্রমিক অধিকার সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারা আইনি সহায়তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন