যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ নতুন নয়। এবার তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে কাতার থেকে পাওয়া একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ এবং একটি নতুন স্মার্টফোন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কেন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো করতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, বাইডেন প্রশাসনের এই ব্যর্থতা ট্রাম্পকে আরও সুবিধা করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন, তখন তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মেম কয়েন (memecoin) তহবিলের জন্য ধনী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।
এছাড়াও, কাতার থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ গ্রহণ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল এজেন্সিগুলোতেও কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়েছেন।
এরই মধ্যে ট্রাম্প মোবাইল নামে একটি নতুন ওয়্যারলেস সেবা চালু করেছে তাঁর কোম্পানি। এই সেবার মাসিক পরিকল্পনা এবং একটি নতুন স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে ৪৯৯ ডলারে। এই স্মার্টফোন ব্যবসার বিষয়টিও এখন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এর সঙ্গে জড়িত ফেডারেল সংস্থাগুলোর অনেক শীর্ষ পদে ট্রাম্পের লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং নীতি-নির্ধারণী ফোরামের বিশেষজ্ঞরা এখন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ভাবছেন, কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো এবং এটি কিভাবে প্রতিরোধ করা যেত। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষমতা থাকার সময় বাইডেন প্রশাসন আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারতো।
যদিও ট্রাম্পের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য মূলত তাঁকেই দায়ী করা হচ্ছে, তবুও তাঁদের অনেকে মনে করেন, বাইডেনও এক্ষেত্রে কিছু দায় এড়াতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসন যদি ওয়াটারগেট-পরবর্তী সময়ের মতো সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করত, তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। তাঁদের মতে, ডেমোক্র্যাটদের হাতে যখন ক্ষমতা ছিল, তখন তাঁরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন।
যদিও বাইডেন প্রশাসনের একজন সাবেক কর্মকর্তা ট্রাম্পকে সরাসরি দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, বাইডেনকে দোষারোপ করাটা ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান সমস্যার একটি উদাহরণ। ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ট্রাম্পের এই ধরনের নৈতিক স্খলন বন্ধ করার কোনো উপায় নেই।
তবে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি নির্বাহী বিভাগের ‘অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার’ করছেন এবং তাঁর প্রশাসন ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বচ্ছ’। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের কোম্পানি সম্প্রতি একটি নতুন ‘নৈতিক অঙ্গীকার’ প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ট্রাম্প তাঁর রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকবেন না এবং বিদেশি সরকারের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করবেন না। এছাড়াও, একটি বহিরাগত উপদেষ্টা সকল গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি পর্যালোচনা করবেন।
যদিও কিছু ফেডারেল নৈতিকতা বিষয়ক আইন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসন কোভিড-১৯ ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল, যে কারণে হয়তো নৈতিক সংস্কারের বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।
তবে সমালোচকদের মতে, ডেমোক্র্যাটদের উচিত ছিল যখন তাঁদের হাতে ক্ষমতা ছিল, তখন এই ধরনের সংস্কারগুলো অগ্রাধিকার দেওয়া। কারণ, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দুর্নীতির বিষয়টি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন