গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ৫৪ জন।
খান ইউনিসে জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খান ইউনুসের কাছে একটি বাড়ির ওপর বিমান হামলার পরেই ইসরায়েলি সেনারা ভিড়ের ওপর গুলি চালায়। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। খবর অনুযায়ী, নিহতদের মরদেহ স্থানীয় নাসির হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সেনারা খান ইউনুসে একটি ত্রাণ ট্রাকের কাছে জড়ো হওয়া লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ঘটনার তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউসেফ নওফাল জানিয়েছেন, তিনি অনেক মানুষকে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, সেনারা এলাকা ছেড়ে পালানোর সময়ও গুলি চালাচ্ছিল। মোহাম্মদ আবু কেশফা নামের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও ভারী গুলির শব্দ শুনেছেন। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন।
গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ পাঠানোর জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিক ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে অনেক ত্রাণ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠন এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে গাজায় জরুরি ত্রাণ সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় এবং ইসরায়েলের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ফলে মানবিক নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের জন্য খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমও নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসকে ত্রাণ সহায়তা পেতে বাধা দিতে চায়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ জোরদার করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৫,৩০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
এই ঘটনার পর, স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, তারা খাদ্য বিতরণের স্থানগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণের শিকার হচ্ছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের খাদ্য কিংবা ত্রাণ নয়, বরং জীবনের নিরাপত্তা দরকার।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস