গত সপ্তাহে ইসরায়েল এক সুপরিকল্পিত সামরিক ও গোয়েন্দা অভিযানের মাধ্যমে ইরানকে হতবাক করে দিয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বছরের পর বছর ধরে চলা গোয়েন্দা কার্যক্রমের ফল ছিল এই অভিযান।
খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল উচ্চ-পর্যায়ের কিছু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, যা ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।
অভিযানের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন এবং এরপর ড্রোন ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের মাধ্যমে আঘাত হানা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে সক্ষম হয়, যার ফলে তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করতে পারে।
এতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন।
এই অভিযানের পরিকল্পনা কয়েক বছর ধরে চলছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, মোসাদ (ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা) এবং সামরিক বাহিনী যৌথভাবে এই অভিযানের প্রস্তুতি নেয়।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ইরানের অভ্যন্তরে অস্ত্র ও ছোট আকারের সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করা হয়েছিল, যা হামলার শুরুতে কাজে লাগানো হয়।
লক্ষ্যবস্তু নির্বাচনে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে দ্রুততার সঙ্গে উপযুক্ত লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইরানের সামরিক কর্মকর্তাদের গতিবিধি এবং তাদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।
হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এবং সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরিসহ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়।
এছাড়াও, মোসাদ ইরানের শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বিপ্লবী গার্ডের সদস্যদের শনাক্ত করতে গুপ্তচরদের ব্যবহার করে।
একটি হামলায় বিপ্লবী গার্ডের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধানসহ অন্তত আটজন নিহত হন।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের কৌশল অনেকটা ইউক্রেনের অনুরূপ ছিল।
ইউক্রেনীয় বাহিনী যেমন রাশিয়ার অভ্যন্তরে ড্রোন ব্যবহার করে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষতিসাধন করেছে, তেমনিভাবে ইসরায়েলও এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছে।
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা কয়েকটি মিনি-ড্রোন এবং ট্যাকটিক্যাল ড্রোন সনাক্ত করেছে।
ইরানের পুলিশ প্রধান জেনারেল আহমাদরেজা রাদান জানান, “কয়েকজন বিশ্বাসঘাতক দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে কিছু মিনি-ড্রোন ওড়াচ্ছিল।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।
এর আগে সাইবার হামলা এবং ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
ধারণা করা হয়, ২০০৮ সালে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোতে ‘স্টাক্সনেট’ নামক একটি কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছিল, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টা ছিল।
২০১৮ সালে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক গবেষণা সংক্রান্ত একটি বিশাল সংগ্রহও চুরি করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
ইরানের নেতারা যদিও তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করেন, কিন্তু তারা অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।