গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকালে খান ইউনিসে সংঘটিত এই ঘটনার কথা জানিয়েছে।
আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে ত্রাণ সংগ্রহের সময় নিহত হওয়ার ঘটনাগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।
ইসরায়েল গাজায় ১১ সপ্তাহের অবরোধ শিথিল করার পর থেকে ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর কাছে প্রায় ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০০ জন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খান ইউনিসের ওই এলাকায় ত্রাণ বিতরণকারী একটি গাড়ির কাছে সৈন্যদের উপস্থিতি ছিল। আইডিএফ আরও জানায়, তারা ঘটনার বিস্তারিত পর্যালোচনা করছে এবং “নির্দোষ ব্যক্তিদের কোনো ক্ষতির জন্য তারা দুঃখিত।”
তবে ফিলিস্তিনি প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারত জনতার ওপর বিমান হামলা চালানো হয়। মোহাম্মদ আবু আবেদ নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মানুষের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
আবু আবেদের ভাষ্যমতে, “আমরা আটা বা রুটি সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তারা আমাদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে।” মঙ্গলবার খান ইউনিসের ঘটনার দৃশ্য ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে পড়ে থাকা বহু মরদেহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় বসবাস করা প্রায় ২১ লক্ষ মানুষের জীবন দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছে।
কিন্তু তাদের বিতরণ কেন্দ্রগুলো সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করার কারণে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, “ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ সরবরাহ আটকে দিচ্ছে। আমি জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য বিতরণের কেন্দ্রগুলোতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।
খান ইউনিসে নিহতদের মধ্যে ছিলেন ২০ বছর বয়সী এক যুবক।
তিনি পরিবারের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিলেন। নিহত যুবকের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সে তো পিকনিকে যায়নি, সে তার ভাইবোন ও বাবার জন্য খাবার আনতে গিয়েছিল।”
নাসির মেডিকেল কমপ্লেক্সে আহতদের ভিড় দেখা গেছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বহু হতাহত ব্যক্তি সেখানে এসেছেন।
হাসপাতালের মর্গে জায়গা না হওয়ায় মরদেহগুলো বাইরে রাখতে হয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন