ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে আটকে পড়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জরুরি তৎপরতা শুরু হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং আকাশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকট আরও বেড়েছে।
অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো স্থল সীমান্ত ব্যবহার করা। মঙ্গলবার পাওয়া খবর অনুযায়ী, অনেক দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের ইরান ও ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের কীভাবে নিরাপদে এলাকা ত্যাগ করতে হবে, সেই বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে। আবার কিছু দেশ আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার জন্য অপেক্ষা করতে বলছে।
জানা গেছে, ইরান সাতটি দেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত ಹೊಂದಿದೆ: আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান, তুরস্ক ও তুর্কমেনিস্তান। এই সীমান্তগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে যাচ্ছেন।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সোমবার আজারবাইজান ও তুরস্কের দিকে যাওয়া বহরে করে ইরান থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে। পোল্যান্ডও তেহরান থেকে তাদের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিচ্ছে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু হয়ে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, তেহরানে অবস্থিত রুশ দূতাবাস আজারবাইজানের সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ার নাগরিকদের নিরাপদে সরানোর জন্য দিনরাত কাজ করছে। তিনি আরও জানান, যারা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তাদের সকলের জন্য সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এর আগে, মস্কো তাদের নাগরিকদের বাণিজ্যিক উপায়ে ইরান ও ইসরায়েল ছাড়তে পরামর্শ দিয়েছিল। রুশ দূতাবাস জানিয়েছে, ইতিমধ্যে কয়েকশ’ মানুষ আস্তারা সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে আজারবাইজান গেছেন।
তাদের মধ্যে ছিলেন ইরানে কর্মরতদের পরিবার, চাইকোভস্কি সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার সদস্য এবং বেলারুশ, সার্বিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের নাগরিক।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইরান থেকে বাসে করে নাগরিকদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের নাগরিকদের ইসরায়েলে যেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
চীন জানিয়েছে, তারা তাদের নাগরিকদের সাহায্য করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে।
সাইপ্রাস, যা ইসরায়েলের নিকটতম ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, জানিয়েছে পর্তুগাল ও স্লোভাকিয়া তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের জন্য সাহায্য চেয়েছে। সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্টান্টিনোস কম্বোস সোমবার জানান, তার সরকার অন্যান্য সরকার থেকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাগরিকদের জন্য সাহায্য চেয়ে অনুরোধ পেয়েছে।
এছাড়াও, তাইওয়ানের সরকার ইসরায়েলে থাকা তাদের নাগরিকদের জর্ডানে যাওয়ার জন্য একটি বাস ব্যবস্থা করে সাহায্য করেছে। সেখানকার দূতাবাস থেকে তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স তাদের নাগরিকদের ইসরায়েলে আশ্রয় নেওয়ার এবং জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে, দেশটির পক্ষ থেকে ইরান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড দূতাবাস তাদের নাগরিকদের তেহরান ছাড়তে বলেছে এবং একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য দূতাবাস তাদের কর্মীদের পরিবারকে ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারগুলোর এমন তৎপরতা চলছে।
ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই এখন সবার নজর।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস