ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসের আমদানি বন্ধ করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মঙ্গলবার, ইউরোপীয় কমিশন এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে, যা কার্যকর হলে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে রাশিয়ান গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে নতুন কোনো চুক্তি করা যাবে না। বিদ্যমান স্বল্প-মেয়াদী চুক্তিগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে।
প্রস্তাবটিতে ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে গ্যাস ও তেলের সকল আমদানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “রাশিয়া তাদের জ্বালানি সরবরাহকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছে। আমরা রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা চিরতরে বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছি।”
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, রাশিয়ার মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো কোম্পানিকে ইইউ-এর এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল পরিষেবাগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করার অনুমতি দেওয়া হবে না। এর ফলে টার্মিনালগুলোর সক্ষমতা বিকল্প সরবরাহকারীদের দিকে ঘোরানো যাবে।
তেল আমদানির ক্ষেত্রে, যে সকল সদস্য রাষ্ট্র এখনো মস্কো থেকে তেল আমদানি করছে, তাদের জন্য ২০২৭ সালের মধ্যে এই সরবরাহ বন্ধ করার পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত বছর হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়া পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি করছিল।
এই প্রস্তাবটি ইইউ-এর ‘রিপাওয়ারইইউ’ পরিকল্পনারই একটি অংশ, যা ২০২২ সালের মে মাসে রাশিয়ার জ্বালানির উপর ব্লকের নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
তবে, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো কিছু দেশের সরকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করতে পারে। তাই, প্রস্তাবটি পাস করার জন্য একটি ‘যোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা’র প্রয়োজন হবে, যার অর্থ হলো ইইউ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন থাকতে হবে, যা ব্লকের জনসংখ্যার অন্তত ৬৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
এর ফলে, প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদনের পরিবর্তে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটের মাধ্যমেই কার্যকর করা যাবে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই ইইউ রাশিয়ান জ্বালানির আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাশিয়ার গ্যাসের আমদানি ছিল ১৯ শতাংশ, যেখানে ২০২১ সালে তা ছিল ৪৫ শতাংশ।
একইভাবে, ২০২৪ সালে ইইউ-এর মোট তেল আমদানির মাত্র ৩ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে, যা ২০২২ সালের শুরুতে ছিল ২৭ শতাংশ।
গত সপ্তাহে, ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা মস্কোর তেল ও গ্যাস থেকে আয় কমানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ান তেলের দাম ব্যারেল প্রতি $60 থেকে $45-এ নামিয়ে আনা এবং রাশিয়ার ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর পূর্ণ লেনদেন নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন বলেছেন, “শক্তিই রাশিয়ার বোঝার একমাত্র ভাষা।” নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর করতে হলে ইইউ-এর ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন