মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা: মিত্র হারানোর শঙ্কা সত্ত্বেও কি লাভবান হবে রাশিয়া?
মধ্যপ্রাচ্যে আবারও অস্থিরতা বাড়ছে, আর এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া কি তার পুরনো কৌশল অবলম্বন করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে? সম্প্রতি ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরেছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতেও রাশিয়া লাভবান হতে পারে। একদিকে যেমন ইরানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারাতে হতে পারে, তেমনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়ার অর্থনীতি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার জন্য ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘কৌশলগত অংশীদার’। এই দুই দেশের মধ্যে পশ্চিমা প্রভাব ও মূল্যবোধের প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা রয়েছে।
এছাড়াও, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করে ইরান। যদিও এই ড্রোনগুলোর উৎপাদন এখন অনেকটাই রাশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে, তবুও ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় রাশিয়ার উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ইরানের সরবরাহ কমে গেলে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতায় প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে, রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকের পর এবার ইরানের মতো মিত্রদের হারালে রাশিয়ার জন্য তা হবে বেশ বড় ধাক্কা।
তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট রাশিয়ার জন্য নতুন সুযোগও নিয়ে আসতে পারে। কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্বে তেলের দাম বাড়ছে, যা রাশিয়ার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে চাইছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া রাশিয়া এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
তারা মনে করে, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব আরও বাড়াতে চাইছেন।
ইতিমধ্যেই পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। সেখানে তিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে রাশিয়ার ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া আবারও এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। ট্রাম্পও এই বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতি ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে। ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায়, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, তেলের দাম বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন