উত্তর কোরিয়ায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতি : সরকারি অস্বীকারের আড়ালে এক ভয়াবহ চিত্র।
বিশ্বজুড়ে যখন কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব, উত্তর কোরিয়া তখন দাবি করে আসছিল তাদের দেশে কোনো সংক্রমণ নেই। কিন্তু সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। এতে দেখা যাচ্ছে, দেশটির সাধারণ মানুষেরা মহামারীর ভয়াবহতা কিভাবে মোকাবিলা করেছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS) এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গোপনে উত্তর কোরিয়ার ভেতরে প্রায় একশ জনের সাথে কথা বলে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলোতে উঠে এসেছে, কিভাবে কোভিড-১৯ দেশটিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল, কিন্তু সরকার তা স্বীকার করতে রাজি ছিল না।
উল্টো, তারা বাইরের বিশ্বকে ভুল তথ্য দিয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল খুবই সীমিত। অনেক মানুষ হয়তো আসল ওষুধ পায়নি, ভুয়া বা ভেজাল ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। এমনকি, অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছামতো ওষুধ খেয়েছেন, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশটির প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষ বা তাদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায়, রোগীরা বুঝতে পারছিলেন না তারা আসলে কিসে আক্রান্ত।
সরকার সংক্রমণের কথা অস্বীকার করায়, মানুষজন বিভিন্ন লোকাল পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে শুরু করে। কেউ লবণ জল দিয়ে গার্গল করেছেন, কেউ রসুন ব্যবহার করেছেন, আবার কেউ হয়তো অন্য কোনো ভেষজ চিকিৎসা নিয়েছেন। এমনকি, অনেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা ওষুধ সেবন করেছেন, যার ফলে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীরও অভাব ছিল। খুব সামান্য সংখ্যক মানুষ সরকারিভাবে মাস্ক পেয়েছিলেন। অনেকেই নিজেদের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন।
লকডাউনের কারণে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৮১ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা খাদ্য সংকটে ভুগেছেন। তাদের কাছে খাবার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমনিতেই দুর্বল। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সেই দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে। ভ্যাকসিনেরও অভাব ছিল মারাত্মক।
যদিও সরকার পরে চীনের সহায়তায় কিছু ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছিল, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোগ সম্পর্কে তথ্য জানানোও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় ক্লিনিক ও পাড়া-মহল্লার কর্মকর্তাদের আক্রান্তদের তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হতো। কিন্তু সেই তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতো না।
এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার তথ্য গোপন করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল, সাধারণ মানুষ যেন জানতে না পারে দেশের পরিস্থিতি কতটা খারাপ।
প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাননি। অর্ধেকের বেশি মানুষ সরকারের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ঘোষণাগুলোর ওপর আস্থা রাখতে পারেননি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন