যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে চলেছে? এমন এক প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এমন আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে এমন আলোচনা চলছে যে, ইসরায়েলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন খুব শীঘ্রই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত ‘বাঙ্কার-বাস্টিং’ বোমা ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে, যা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই সরবরাহ করা সম্ভব।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করতে ইসরায়েল যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় এমনটা ঘটতে পারে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে নিজস্ব কিছু রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও থাকতে পারে।
এর আগে, ক্ষমতা গ্রহণের সময় ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
কিন্তু এখন যদি তিনি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান, তবে তা হবে তার আগের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য এই পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
ইরানের পক্ষ থেকেও এর জোরালো প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে।
এমনকি, সাইবার হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও যুদ্ধের বিস্তার ঘটতে পারে।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপগুলো—যেমন ইরাক ও আফগানিস্তানে—দীর্ঘমেয়াদে কোনো স্থিতিশীলতা আনতে পারেনি।
বরং, এগুলো নতুন করে সংঘাতের জন্ম দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য হুমকি তৈরি করেছে।
এবারও যদি তেমন কিছু হয়, তবে তা হবে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এর সম্ভাব্য পরিণতিগুলো গভীরভাবে বিবেচনা করা উচিত।
কারণ, এমন একটি পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসীর জীবন এতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তবে তা শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকবে না, বরং তা হবে একটি বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, যাতে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন