এথেন্সের উপকূলে: এক সময়ের ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ থেকে নতুন রূপে ফেরা
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গ্রিসের রাজধানী এথেন্স। আর এই শহরের কাছেই রয়েছে এক অসাধারণ উপকূলীয় অঞ্চল, যা একসময় পরিচিত ছিল ‘এথেনীয় রিভিয়েরা’ নামে।
১৯৬০ ও ১৯৮০ এর দশকে, এই রিভিয়েরা ছিল গ্ল্যামার আর আভিজাত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই অঞ্চলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, পরিষ্কার জলরাশি, আর পাম গাছের সারি আজও অনেক পর্যটকের কাছে স্বপ্নের ঠিকানা। সম্প্রতি, এই উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন করে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
এথেনীয় রিভিয়েরা, যা প্রায় ৪০ মাইল বিস্তৃত, পিরিয়াস বন্দর থেকে শুরু করে আটিকা অঞ্চলের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কেপ সাউনিউম পর্যন্ত বিস্তৃত।
এক সময়ে এটি ছিল তারকা এবং সমাজের উচ্চপদস্থ লোকেদের জন্য একটি প্রিয় গন্তব্য। এখানে অবকাশ যাপনের জন্য আসতেন বহু সেলিব্রেটি। এমনকি, শোনা যায়, অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দোকে নাকি গ্লিফাদার একটি সমুদ্র সৈকতে খালি পায়ে নাচতে দেখা গিয়েছিল! বিখ্যাত গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা তাঁর ‘ফোর সিজনস অ্যাস্টর প্যালেস হোটেল’-এর বারান্দা থেকে প্রায়ই গান শোনাতেন।
১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে এই অঞ্চলের খ্যাতি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে এটিকে ‘গ্রিসের কোট ডি’আজুর’ নামেও ডাকা হত। কোট ডি’আজুর ফ্রান্সের একটি সুন্দর উপকূলীয় অঞ্চল, যা তার সৌন্দর্য্যের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত।
কিন্তু ১৯৯০ এর দশকের শেষ দিকে এসে এই অঞ্চলের উন্নতি কিছুটা কমে যায়। পর্যটকদের আগ্রহও কমতে শুরু করে, কারণ অনেকে এথেন্সের পরিবর্তে কাছাকাছি দ্বীপ যেমন – সান্তোরিনি এবং মিকোনোস-এর দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।
তবে, বর্তমানে এথেনীয় রিভিয়েরা আবার নতুন করে জেগে উঠেছে। এখানে এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন পাঁচতারা হোটেল, আকর্ষণীয় রেস্টুরেন্ট, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চলের পরিবেশ এখনও আগের মতোই সুন্দর রয়েছে – এখানকার আলো, সমুদ্র, এবং গ্রিক আতিথেয়তা আজও পর্যটকদের মন জয় করে।
এই রিভিয়েরায় ঘুরে বেড়ানোর মতো অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। যেমন, পোসাইডনের মন্দির (Temple of Poseidon)। এটি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি এথেনীয় রিভিয়েরার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত।
সমুদ্রের দেবতা পোসাইডনের প্রতি উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরটি দেখতে হলে উপকূল ধরে প্রায় ৪৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে হয়।
ভোলিয়াগмени হ্রদ (Lake Vouliagmeni)-ও এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। এই হ্রদের উষ্ণ জল, যা ভূগর্ভস্থ ঝর্ণা থেকে আসে, সবসময় পর্যটকদের কাছে প্রিয়।
এছাড়াও, এখানে রয়েছে অ্যাস্টির বিচ (Astir Beach), যেখানে স্বচ্ছ জল এবং আধুনিক সব সুবিধা বিদ্যমান। ভোলিয়াগмени বিচ (Vouliagmeni Beach)-এ স্থানীয়দের আনাগোনা সবসময় লেগে থাকে।
এই বিচ-এর পাশে অনেকগুলো স্থানীয় খাবারের দোকানও রয়েছে।
যারা সংস্কৃতি ভালোবাসেন, তাদের জন্য রয়েছে স্ট্যাভ্রোস নিয়ারকোস ফাউন্ডেশন কালচারাল সেন্টার (Stavros Niarchos Foundation Cultural Center)। এই কেন্দ্রে পরিবেশ-বান্ধব স্থাপত্যশৈলী দেখা যায়।
এখানে একটি অত্যাধুনিক লাইটহাউসও রয়েছে, যেখান থেকে শহরের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এছাড়াও, এথেন্স থেকে নৌকায় করে সারোনিক উপসাগরের দ্বীপগুলোতে (Saronic Gulf islands) সহজেই যাওয়া যায়। কাছাকাছি অবস্থিত ইজিনা (Aegina) অথবা পোরোস (Poros) দ্বীপগুলোতে দুপুরের খাবার খেয়ে রাতের মধ্যে এথেন্সে ফেরা সম্ভব।
এথেনীয় রিভিয়েরার রেস্টুরেন্টগুলোও বেশ জনপ্রিয়। টাভার্না ৩৭ (Taverna 37)-এ বসে মোমবাতির আলোয় রাতের খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা। এখানে স্থানীয় সি-ফুড এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়।
বার্বারোসা (Barbarossa)-র মেন্যুতেও সি-ফুডের বিভিন্ন পদ পাওয়া যায়। এছাড়াও, আইল্যান্ড ক্লাব ও রেস্টুরেন্ট (Island Club & Restaurant) এবং মাক্রিস এথেন্স (Makris Athens)-এর মতো জায়গায়ও ভালো খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
কেনাকাটার জন্য, আপনি যেতে পারেন ইওআনু মেটাক্সা স্ট্রিটে (Ioannou Metaxa Street)। গ্লিফাদার এই প্রধান সড়কে গ্রিক ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের দোকান এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সমাহার রয়েছে।
এছাড়াও, দ্য ন্যাক্সোস অ্যাপোথেকারি (The Naxos Apothecary)-তে স্থানীয়ভাবে তৈরি সুগন্ধি ও অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায়।
এথেনীয় রিভিয়েরায় থাকার জন্য কয়েকটি ভালো হোটেলের মধ্যে রয়েছে ফোর সিজনস অ্যাস্টর প্যালেস হোটেল এথেন্স (Four Seasons Astir Palace Hotel Athens)। এছাড়া, ২১-এর দশকে খোলা ‘৯১ এথেন্স রিভিয়েরা’ (91 Athens Riviera)-তেও থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে।
এথেনীয় রিভিয়েরা, এক সময়ের গ্ল্যামারের ঠিকানা, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুন রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য গ্রিসের এই উপকূলীয় অঞ্চল হতে পারে এক অসাধারণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক