যুদ্ধ আর শিকারের নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি পাওয়া একটি ভালুক, বর্তমানে আশ্রয়ে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। মাসা নামের এই ভালুক সম্প্রতি দীর্ঘ ঘুমের জন্য একটি প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছে, যা পশুপ্রেমীদের কাছে এক বিশেষ সম্মানের বিষয়।
আঠারো বছর বয়সী মাসা ইউক্রেনের ‘বিয়ার স্যাংচুয়ারি ডোমাজির’-এর বাসিন্দা। সম্প্রতি ‘ফোর পজ’ নামক একটি আন্তর্জাতিক প্রাণী কল্যাণ সংস্থার আয়োজিত ‘মার্চ ন্যাপনেস’ প্রতিযোগিতায় সে প্রথম স্থান অধিকার করে।
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ভালুকেরা শীতকালে কত সময় ধরে ঘুমায়, তারই হিসাব রাখা হয়। মাসা তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে তিন দিন বেশি ঘুমিয়ে এবারের খেতাব জয় করে।
মাসা-র অতীতের জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের। শিকারের উদ্দেশ্যে তাকে ব্যবহার করা হতো। শিকারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মাসাকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হতো এবং নিয়মিত কুকুরের সঙ্গে লড়াইয়ে নামানো হতো।
২০১৩ সালে মাসাকে উদ্ধার করা হয় এবং ২০১৮ সালে তাকে ‘বিয়ার স্যাংচুয়ারি ডোমাজির’-এ নিয়ে আসা হয়।
আশ্রয়ে আসার আগে মাসা অনেক মানসিক আঘাত পেয়েছিল। শিকারের কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় তার লেজটিও কুকুরে ছিঁড়ে ফেলেছিল। ‘বিয়ার স্যাংচুয়ারি ডোমাজির’-এর কর্মীরা জানান, মাসা এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
এখানে সে নিরাপদ বোধ করে এবং জানে যে কেউ তাকে আর কষ্ট দেবে না।
মাসা-র জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে তার বন্ধু পটাপ। তারা একসঙ্গে খেলা করে, সাঁতার কাটে এবং শান্তভাবে সময় কাটায়।
আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা বলেন, মাসা ও পটাপ-এর সম্পর্ক আধুনিক সমাজের একটি সুন্দর উদাহরণ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনেও ‘বিয়ার স্যাংচুয়ারি ডোমাজির’-এর কর্মীরা মাসা এবং অন্যান্য ভালুকদের দেখাশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণের ফলে এখানকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায়।
কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব থেকে একচুলও নড়েননি। তারা সবসময় ভালুকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।
মাসা এখন একটি আত্মবিশ্বাসী, কৌতূহলী ভালুকে পরিণত হয়েছে। সে পটাপের সঙ্গে খেলা করে, বনে ঘোরে এবং বিভিন্ন খেলনার সঙ্গে সময় কাটায়।
আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা আশা করেন, মাসার এই জয় উদ্ধারকৃত অন্যান্য প্রাণীদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং তাদের ভালো থাকার বার্তা দেবে।
তথ্য সূত্র: পিপল