যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ বিতরণের নামে সাবেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত কিছু বেসরকারি কোম্পানির কার্যক্রম বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ সুদান এবং গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার নামে এই কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড মানবিক সহায়তা প্রদানের মূলনীতিগুলোর পরিপন্থী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও সামরিক কর্মকর্তাদের পরিচালনায় থাকা এই কোম্পানিগুলো মূলত লাভজনক উদ্দেশ্যে কাজ করে। তারা এমন সব অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ করছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো নিজেরাই সরাসরি সংঘাতের সঙ্গে জড়িত। এই পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা বিতরণে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোও বিষয়টিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
দক্ষিণ সুদানে ‘ফগবো’ নামের একটি মার্কিন কোম্পানি খাদ্য সহায়তা সরবরাহ করছে। দেশটির সরকারের অর্থায়নে তারা আকাশপথে খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী ফেলছে। কোম্পানিটির প্রধান, সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা মাইকেল মুলরয় বলছেন, তারা একটি মানবিক সংস্থা হিসেবে কাজ করতে চায়। তবে জাতিসংঘের পাশাপাশি ‘অক্সফাম আমেরিকা’র মতো সংস্থাগুলো বলছে, এই ধরনের কোম্পানির মানবিক কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এছাড়াও, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো অঙ্গীকার দেখা যায় না।
অন্যদিকে, গাজায় ‘সেইফ রিচ সলিউশনস’ নামের আরেকটি কোম্পানি কাজ করছে, যার নেতৃত্বেও রয়েছেন সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তারা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামের একটি মার্কিন-সমর্থিত সংস্থার সঙ্গে মিলে ত্রাণ বিতরণ করছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, জাতিসংঘের পরিবর্তে এই নতুন ব্যবস্থা গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেবে। কিন্তু স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই কার্যক্রমের ফলে গাজায় খাদ্য সংগ্রহের সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে। এতে করে খাদ্য বিতরণের বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংঘাতের পক্ষগুলোর সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানির এই ধরনের সহযোগিতা মানবিক সহায়তাকে দুর্বল করে দিতে পারে। সাহায্য বিতরণের ক্ষেত্রে যদি কোনো পক্ষ একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কিছু সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা থাকে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই ধরনের কার্যকলাপ মানবিকতার আদর্শের পরিপন্থী। তারা মনে করে, এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা মনে করেন, জরুরি পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত না করা গেলে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সঠিক সময়ে সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস