**ডেট্রয়েট: আমেরিকার ‘মোটর সিটি’ থেকে শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্র – নগর উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত**
একসময় আমেরিকার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডেট্রয়েট। গাড়ির কলকারখানার শহর হিসেবে এর পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই শহরের আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে, এমনকি দেউলিয়াত্বের পর্যায়েও পৌঁছে যায়। কিন্তু হার না মানা মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সৃজনশীলতার মাধ্যমে ডেট্রয়েট আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা এখন বিশ্বজুড়ে নগর উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ডেট্রয়েটের শিল্প-কারখানায় স্বয়ংক্রিয়তা আসায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়। উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শ্বেতাঙ্গ শ্রমিকদের শহর ছেড়ে যাওয়া এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য বাড়তে থাকায় শহরটিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। এর ফলস্বরূপ, ২০১৩ সালে ডেট্রয়েট যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম পৌর দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। একসময়কার সমৃদ্ধ শহরটি যেন ‘নগর-অবক্ষয়’, অপরাধ এবং আমেরিকান স্বপ্নের পতনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।
তবে, এই পতনের গল্প এখন অতীত। নতুন বিনিয়োগ, স্থানীয় মানুষের উদ্যম এবং শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের মাধ্যমে ডেট্রয়েট-এর পুনর্জন্ম হয়েছে। শহরের পুরনো এলাকাগুলোতে নতুন করে সাজসজ্জা করা হয়েছে। কর্কটাউন-এর মত এলাকায় পুরনো ইটের বাড়িগুলোর পাশে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক কফি শপ ও আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্ট। এক সময়ের পরিত্যক্ত মিশিগান সেন্ট্রাল স্টেশন-এর মত ভবনগুলো ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ডেট্রয়েট নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নতুন পার্ক ও সাইকেল চালানোর পথ। এমনকি, ১৯৫৭ সালের পর প্রথমবারের মতো, গত বছর ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এখানকার মানুষ। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তারা তাদের শহরকে ভালোবাসে এবং নতুন করে জীবন দিতে চেয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা, শিল্পী এবং সংস্কৃতি কর্মীরা তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে শহরটিকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন। মিডটাউন-এর জ্যাজ বারগুলোর আওয়াজ এখন শহরের আনাচে-কানাচে শোনা যায়। ডেট্রয়েট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস-এর মত বিখ্যাত গ্যালারিগুলোতে ভিড় লেগে থাকে, আর পুরনো শিল্প করিডোরগুলো এখন শিল্পকর্মের স্থান। কর্পোরেট সংস্থা, বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এবং স্থানীয় উদ্যোগগুলো এখন এই শহরের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করছে, যা প্রায় ৮০% কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের বসবাস করা এই শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সাহায্য করছে।
শিল্পকলার পাশাপাশি, এখানে নতুন ব্যবসা, বার এবং রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে, যা ডেট্রয়েটের মানুষের সৃজনশীলতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখানকার শেফরা তাদের নিজস্ব রেসিপি তৈরি করে শহরের খাদ্য সংস্কৃতিকে নতুন রূপ দিয়েছেন। ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে এখানকার মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, যা কখনোই থেমে থাকেনি।
ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনের সাক্ষী হতে চাইলে, কিছু জায়গার কথা না বললেই নয়।
শপিং-এর জন্য রয়েছে কিছু দারুণ জায়গা:
ডেট্রয়েটের খাদ্যরসিকদের জন্য কিছু পছন্দের জায়গা:
রাতের বেলার জন্য কিছু জায়গা:
ডেট্রয়েটের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটি প্রমাণ করে, মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সৃজনশীলতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে কোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। নগর উন্নয়নে ডেট্রয়েটের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের শহরগুলোর জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক