1. rajubdnews@gmail.com : adminb :
  2. babu.repoter@gmail.com : Babu : Nurul Huda Babu
July 18, 2025 4:22 AM
সর্বশেষ সংবাদ:
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি কালুকে ৫ টি টিকিটসহ গ্রেফতার করেন, রেলওয়ে থানা পুলিশ এনসিপি নেতৃবৃন্দের উপর হামলার প্রতিবাদে মাদারীপুরে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ কাপ্তাই প্রজেক্ট  শহীদ আলমগীর এর ৩৮তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন  কাপ্তাইয়ে ২৪এর রঙে  গ্রাফিতি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা  পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই যোদ্ধারা শোনালেন জুলাইয়ের দুঃসহ স্মৃতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাজেট কাটছাঁট: সিনেটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত! লামিন ইয়ামালের জন্মদিনের পার্টি: বিতর্ক! বামনদের নিয়ে মন্তব্যে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া ইরাকের কুতে বহুতল ভবনে আগুন, নিহত বহু! যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকারের সঙ্কট: জরুরি অবস্থা ঘোষণা! গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে মাদারীপুরে এনসিপির সমাবেশ স্থগিত

বদলে যাওয়া ডেট্রয়েট: শিল্পের দুনিয়ায় এক অভাবনীয় উত্থান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট হয়েছে : Wednesday, June 18, 2025,

**ডেট্রয়েট: আমেরিকার ‘মোটর সিটি’ থেকে শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্র – নগর উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত**

একসময় আমেরিকার অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডেট্রয়েট। গাড়ির কলকারখানার শহর হিসেবে এর পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই শহরের আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে, এমনকি দেউলিয়াত্বের পর্যায়েও পৌঁছে যায়। কিন্তু হার না মানা মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সৃজনশীলতার মাধ্যমে ডেট্রয়েট আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা এখন বিশ্বজুড়ে নগর উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ডেট্রয়েটের শিল্প-কারখানায় স্বয়ংক্রিয়তা আসায় কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়। উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শ্বেতাঙ্গ শ্রমিকদের শহর ছেড়ে যাওয়া এবং কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য বাড়তে থাকায় শহরটিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। এর ফলস্বরূপ, ২০১৩ সালে ডেট্রয়েট যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বৃহত্তম পৌর দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। একসময়কার সমৃদ্ধ শহরটি যেন ‘নগর-অবক্ষয়’, অপরাধ এবং আমেরিকান স্বপ্নের পতনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।

তবে, এই পতনের গল্প এখন অতীত। নতুন বিনিয়োগ, স্থানীয় মানুষের উদ্যম এবং শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের মাধ্যমে ডেট্রয়েট-এর পুনর্জন্ম হয়েছে। শহরের পুরনো এলাকাগুলোতে নতুন করে সাজসজ্জা করা হয়েছে। কর্কটাউন-এর মত এলাকায় পুরনো ইটের বাড়িগুলোর পাশে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক কফি শপ ও আন্তর্জাতিক মানের রেস্টুরেন্ট। এক সময়ের পরিত্যক্ত মিশিগান সেন্ট্রাল স্টেশন-এর মত ভবনগুলো ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ডেট্রয়েট নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নতুন পার্ক ও সাইকেল চালানোর পথ। এমনকি, ১৯৫৭ সালের পর প্রথমবারের মতো, গত বছর ডেট্রয়েটের জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এখানকার মানুষ। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তারা তাদের শহরকে ভালোবাসে এবং নতুন করে জীবন দিতে চেয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা, শিল্পী এবং সংস্কৃতি কর্মীরা তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে শহরটিকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন। মিডটাউন-এর জ্যাজ বারগুলোর আওয়াজ এখন শহরের আনাচে-কানাচে শোনা যায়। ডেট্রয়েট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস-এর মত বিখ্যাত গ্যালারিগুলোতে ভিড় লেগে থাকে, আর পুরনো শিল্প করিডোরগুলো এখন শিল্পকর্মের স্থান। কর্পোরেট সংস্থা, বিভিন্ন ফাউন্ডেশন এবং স্থানীয় উদ্যোগগুলো এখন এই শহরের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করছে, যা প্রায় ৮০% কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের বসবাস করা এই শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সাহায্য করছে।

শিল্পকলার পাশাপাশি, এখানে নতুন ব্যবসা, বার এবং রেস্টুরেন্ট তৈরি হয়েছে, যা ডেট্রয়েটের মানুষের সৃজনশীলতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখানকার শেফরা তাদের নিজস্ব রেসিপি তৈরি করে শহরের খাদ্য সংস্কৃতিকে নতুন রূপ দিয়েছেন। ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে এখানকার মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, যা কখনোই থেমে থাকেনি।

ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনের সাক্ষী হতে চাইলে, কিছু জায়গার কথা না বললেই নয়।

  • **মোটাউন জাদুঘর (Motown Museum):** ১৯৫৯ সালে বেরি গোর্ডি জুনিয়র ‘মোটাউন’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা নতুন ধারার সঙ্গীতের জন্ম দিয়েছিল। এই রেকর্ড লেবেলটি যে বাড়িতে ছিল, সেটি এখন মোটাউন জাদুঘর। এখানে ‘সুপ্ৰিমস’ এবং ‘স্টিভ ওয়ান্ডার’-এর মত শিল্পীদের গান রেকর্ড করা হতো।
  • **ডেট্রয়েট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস (Detroit Institute of Arts):** এখানে রোদ্যাঁর ‘দ্য থিঙ্কার’-এর মত বিখ্যাত ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়াও মোনে, মাতিস এবং সমসাময়িক আফ্রিকান-আমেরিকান শিল্পীদের মাস্টারপিস এখানে দেখা যায়।
  • **ফোর্ড পিকুয়েট অ্যাভিনিউ প্ল্যান্ট (Ford Piquette Avenue Plant):** এই কারখানায় হেনরি ফোর্ড প্রথম ‘মডেল টি’ তৈরি করেন, যা গাড়ির জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। এখানে ঐতিহাসিক গাড়ির এক বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।
  • **হেনরি ফোর্ড (The Henry Ford):** এখানে আমেরিকান উদ্ভাবনের এক জাদুঘর রয়েছে, যেখানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

শপিং-এর জন্য রয়েছে কিছু দারুণ জায়গা:

  • **রেবেল নেল (Rebel Nell):** এখানে পুরনো গ্রাফিতি থেকে তৈরি গয়না পাওয়া যায়, যা স্থানীয় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।
  • **ওয়েস্ট ক্যানফিল্ড স্ট্রিট (West Canfield Street):** এখানে শিনোলা-এর মত বিখ্যাত ব্র্যান্ডের দোকান রয়েছে। এছাড়াও, কারহার্ট এবং থার্ড ম্যান রেকর্ডসের মত ডেট্রয়েটের নিজস্ব ব্র্যান্ডও এখানে দেখা যায়।
  • **অ্যাভিনিউ অফ ফ্যাশন (Avenue of Fashion):** এখানে কৃষ্ণাঙ্গ উদ্যোক্তাদের তৈরি পোশাকের দোকান দেখা যায়।

ডেট্রয়েটের খাদ্যরসিকদের জন্য কিছু পছন্দের জায়গা:

  • **ডেট্রয়েট ৭৫ কিচেন (Detroit 75 Kitchen):** এখানে লেবানিজ রান্নার স্বাদ পাওয়া যায়। এখানকার স্যান্ডউইচ-এর খ্যাতি রয়েছে।
  • **ক্লিফ বেলস (Cliff Bells):** এটি ডেট্রয়েটের অন্যতম জনপ্রিয় জ্যাজ বার, যেখানে উন্নতমানের খাবারও পরিবেশন করা হয়।
  • **সেলডেন স্ট্যান্ডার্ড (Selden Standard):** স্থানীয় কৃষকদের থেকে আনা উপকরণ দিয়ে এখানে নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হয়।

রাতের বেলার জন্য কিছু জায়গা:

  • **দ্য ভিনাইল সোসাইটি (The Vinyl Society):** এটি কৃষ্ণাঙ্গদের মালিকানাধীন একটি বার, যেখানে জ্যাজ ও ব্লুজ পরিবেশন করা হয়।
  • **দ্য বেল্ট (The Belt):** এখানে বিভিন্ন বার রয়েছে, যেখানে বসে শহরের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  • **ক্যাফে ডি’মঙ্গোস স্পিকইজি (Cafe D’Mongo’s Speakeasy):** এই ক্লাবে পুরনো দিনের জ্যাজ এবং আত্মার গান শোনা যায়।

ডেট্রয়েটের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটি প্রমাণ করে, মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সৃজনশীলতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে কোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। নগর উন্নয়নে ডেট্রয়েটের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের শহরগুলোর জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2019 News 52 Bangla
Theme Customized BY RASHA IT