আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্যখাতে চরম সংকট: ব্যয় সংকোচনের ফল?
বুয়েনস আইরেস, আর্জেন্টিনা – আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জ্যাভিয়ের মলেইয়ের নেওয়া ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ দেশটির স্বাস্থ্যখাতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। একদিকে যেমন স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমেছে, তেমনই চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্জেন্টিনায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ডিসেম্বর ২০২৩-এ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট মলেই স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৮ শতাংশ কমিয়েছেন।
এর ফলস্বরূপ, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা, যেমন ক্যান্সার ও এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আর্জেন্টিনার একটি ফেসবুক গ্রুপে ক্যান্সারের চিকিৎসারত রোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ খুঁজে বের করার জন্য আকুতি জানাচ্ছে।
সরকারি সহায়তার অভাবে, এই রোগীরা এখন জীবন-মরণ সমস্যায় পড়েছেন।
এর আগে, সরকার ক্যান্সার রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করত, কিন্তু মলেইয়ের নীতির কারণে সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ৪৭ বছর বয়সী এরিয়েল ওয়াগনার, যিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত, ওষুধ না পাওয়ায় কিডনি বিকল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
একটি মাসের ওষুধের জন্য তাঁর প্রয়োজন ছিল ২১,০০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ লক্ষ টাকার বেশি।
আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে স্বাস্থ্যখাতে কয়েক দশক পিছিয়ে গেছে দেশটি।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওষুধের দাম বেড়েছে ২৫০ শতাংশ এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম বেড়েছে ১১৮ শতাংশ।
ফলে, অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় খাবার ও অন্যান্য খরচ কমিয়ে চিকিৎসা খরচ মেটাতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট মলেইয়ের এই পদক্ষেপের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য নীতির একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারিও লুগোনেস সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা সচিব রবার্ট এফ. কেনেডির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিভাবে উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে, স্বাস্থ্যখাতে অর্থ কমানোর ফলে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু জনবল ও সরঞ্জামের অভাব দেখা দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, বুয়েনস আইরেসের গাররাহান পেডিয়াট্রিক হাসপাতালে কর্মীরা কম বেতন এবং অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনার কারণে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি।
এইচআইভি, সিফিলিস এবং যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
আর্জেন্টিনার এই সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।
স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় সংকোচনের ফলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবার ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়।
বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে পারেন এবং দেশের স্বাস্থ্যখাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস