বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ পাননি, অথচ ১৪ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে হাজির হলেন এক যুগল! সম্প্রতি এমন এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন ইয়াসেমিন সারলি ও ডেভিডের প্রেম কাহিনী।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে তাদের এক বন্ধুর ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ে (গন্তব্যস্থল-ভিত্তিক বিয়ে) যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
আসলে, ইয়াসেমিন ও ডেভিড ভেবেছিলেন, তাদেরও বুঝি নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।
বিয়ের প্রায় তিন মাস আগে, তারা বিমানের টিকিট ও হোটেলের ঘর বুকিং করে ফেলেন, যাতে ভালো দামে সবকিছু পাওয়া যায়।
বন্ধুদের মুখে শোনা কথা অনুযায়ী, তারা পার্ক হায়াত বুয়েনস আইরেসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আসল ঘটনা ছিল অন্যরকম।
তাদের কেউই বিয়ের নিমন্ত্রণ পাননি!
ইয়াসেমিনের ভাষ্যমতে, “সবকিছুই ছিল ভুল বোঝাবুঝির ফল।” ডেভিডের সঙ্গে তার যখন প্রথম দেখা হয়, তখন তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ডেভিড নাকি বারবার বলতেন, “ছোট্ট একটা বিয়ে, যেখানে পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই থাকবে।” ইয়াসেমিনের কানে সেই কথা শুনে মনে হয়েছিল, “তাহলে তো আমরাও যাচ্ছি।”
এরপর ডেভিড এতটাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সবকিছু বুকিং করেন যে, ইয়াসেমিনও কোনো দ্বিধা করেননি।
কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধে বিয়ের কয়েক দিন আগে। যখন তারা জানতে পারেন, তাদের কাছে বিয়ের কোনো বিস্তারিত খবর নেই।
কোনো সময়সূচি নেই, নেই কোনো গ্রুপ চ্যাটও।
ইয়াসেমিন জানান, “তখনই আমাদের মাথায় আসল, ‘আসল ঘটনাটা কী?’ কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু বুকিং করা হয়ে গেছে।
তাই পিছিয়ে আসারও কোনো উপায় ছিল না।
অগত্যা, তারা দুজনেই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন।
তারা চুপ করে তাদের এই সফরকে গোপন রাখতে চাইলেন।
ইয়াসেমিন বলেন, “আমরা এটাকে একটা ব্যক্তিগত ভ্রমণে রূপান্তর করলাম এবং এমনভাবে নিজেদের উপস্থাপন করলাম, যেন সবকিছু স্বাভাবিক।”
প্রায় ১৪ ঘণ্টা বিমানে চড়ে তারা জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট থেকে বুয়েনস আইরেসে পৌঁছান।
সেখানে ছয় দিন গোপনে কাটানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের।
ইয়াসেমিন বলেন, “আমরা মূলত বিষয়টি গোপন রেখেছিলাম, কারণ এতে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
আমরা চাইনি তাদের বিশেষ দিনের কোনো ক্ষতি হোক।”
এরপর শুরু হয় তাদের ‘আন্ডারকভার’ মিশন।
ইয়াসেমিন জানান, “আমরা তাদের সময়সূচি অনুসরণ করতাম, যেন কোনোভাবেই তাদের চোখে না পড়ি।
যদি জানতে পারতাম, বিবাহিত দলটি সুইমিং পুলে যাচ্ছে, তাহলে আমরা আমাদের ঘরেই থাকতাম অথবা স্পা-এর জন্য বুকিং করতাম।
ডিনারের সময়ও এড়িয়ে চলতাম, যাতে তাদের সঙ্গে দেখা না হয়ে যায়।
এমনকি আমরা এমন পোশাক পরতাম, যা দেখে কেউ বুঝতেই না পারে আমরাও তাদের দলের লোক।
তাদের এই গোপন অভিযান যেন একটা সিনেমার মতোই ছিল।
ইয়াসেমিন মজা করে বলেন, “মনে হচ্ছিল, আমরা যেন ‘মিশন: এড়িয়ে চলো বিবাহিত অতিথিদের’ মতো কোনো সিনেমায় অভিনয় করছি।”
বর্তমানে ইয়াসেমিন ও ডেভিডের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।
তবে মজার বিষয় হলো, ইয়াসেমিন সম্প্রতি টিকটকে তাদের এই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন।
যদিও এখন পর্যন্ত বর-কনে কেউই তাদের এই কাণ্ডের বিষয়ে কিছু বলেননি, তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক এখনো ভালো আছে।
ইয়াসেমিন বলেন, “আসলে, এটা তাদের নিয়ে কোনো বিষয় ছিল না।
এটা ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝি, যা দারুণ একটা গল্প তৈরি করেছে।”
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, ডেভিডের এবার বিয়ে করার কথা রয়েছে এবং ইয়াসেমিনকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ করেছেন।
ইয়াসেমিন বলেন, “আমি অবশ্যই এই গল্পটা সবার সঙ্গে শেয়ার করব।”
তথ্য সূত্র: পিপল