শিরোনাম: যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলের মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ: স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
প্লাস্টিক দূষণ এখন বিশ্বজুড়ে একটি উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকার পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উচ্চ ঘনত্বের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা, কারণ আমাদের দেশেও প্লাস্টিক দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা এবং এর প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অফ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে সমুদ্রের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি, সেখানকার মানুষেরা টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। গবেষণায় উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রের পানিতে থাকা ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঘনত্ব পরীক্ষা করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রতি “গোসলখানার” পানিতে (একটি নির্দিষ্ট এলাকার পানি) যদি ১০ বা তার বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া যায়, তবে সেই এলাকাকে উচ্চ দূষণযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলো আকারে ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট, এমনকি ১ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। উদ্বেগের বিষয় হলো, এই কণাগুলো আমাদের খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। একবার শরীরে প্রবেশ করলে, এগুলো কোষ এবং টিস্যুর গভীরে পৌঁছে যেতে পারে, যা শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
গবেষণায় আরও জানা যায়, মাইক্রোপ্লাস্টিকের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যেমন – বিসফেনল এ (BPA), থ্যালেটস, ফ্লেম রিটার্ডেন্টস, পার- এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ (PFAS) এবং ভারী ধাতু। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করলে লিভার, কিডনি, এমনকি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, এটি ভ্রূণের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রাসায়নিকের প্রভাবে ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কিছু ক্যান্সারেরও ঝুঁকি বাড়ে। গবেষকরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের “ক্যান্সার অ্যালে” নামে পরিচিত অঞ্চলে, যেখানে প্লাস্টিক তৈরির কারখানা বেশি, সেখানে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং শ্বাসকষ্টের মতো রোগগুলো বেশি দেখা যায়।
যদিও এই গবেষণাটি সরাসরি প্রমাণ করতে পারেনি যে মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণের কারণেই রোগগুলো হচ্ছে, তবে এটি একটি সতর্কবার্তা দেয়। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, প্লাস্টিক দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এর প্রভাব অনেক বেশি। প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, খাদ্য প্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার আমাদের দেশে ব্যাপক। এগুলো ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকের জন্ম হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, আমাদের সকলের প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করতে হবে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ, কাঁচের বা স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। খাবার গরম করার জন্য প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য (recyclable) প্লাস্টিক ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণা থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশের ক্ষতি করে না, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি। তাই, এখনই সময় প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতন হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। আসুন, আমরা সবাই মিলে প্লাস্টিক মুক্ত একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন