ফ্লোরিডার একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (HBCU) নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গভর্নর রন ডিসান্তিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন টেলিযোগাযোগ নির্বাহী মার্ভা জনসনকে ফ্লোরিডা এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির (FAMU) ১৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে, এই নিয়োগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা।
তাদের অভিযোগ, জনসনের সঙ্গে ডিসান্তিসের নীতির মিল রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং স্বকীয়তাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রধান উদ্বেগ হলো, জনসন এমন কিছু নীতির সমর্থক যা সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা খর্ব করতে পারে।
তারা মনে করেন, গভর্নর ডিসান্তিস এর আগে বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেমন— শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion বা DEI) বিষয়ক কর্মসূচি বাতিল করা এবং কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান স্টাডিজের পাঠ্যক্রম সীমিত করা।
এছাড়া, বর্ণ, লিঙ্গ বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে নিপীড়িত বা সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত করার ধারণার বিরুদ্ধে একটি আইনও তিনি সমর্থন করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক উইল প্যাকার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে (HBCUs) দখলের জন্য রিপাবলিকানদের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জনসনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
আমরা এমন কাউকে এখানে আসতে দিতে পারি না, যিনি এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত, যারা বিভিন্নতাকে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিগুলোকে, এবং সমতাপূর্ণ অর্থনীতিকে আক্রমণ করে।’
অন্যদিকে, মার্ভা জনসন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান।
আমি শিক্ষার্থী, উদ্ভাবন এবং জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতির ওপর জোর দিয়ে একটি সাহসী ভিশন নিয়ে এই দায়িত্ব পালন করব। একইসঙ্গে, আমি ফ্যামু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলব এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্বকে সমুন্নত রাখব।’
তবে, জনসনের এই নিয়োগের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফ্যামু ন্যাশনাল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কার্টিস জনসন এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাই জনসনের নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, এই নিয়োগের বিরোধিতাকারীরা মনে করেন, জনসনের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অন্য প্রার্থীরা জনসনের চেয়ে বেশি যোগ্য ছিলেন।
ফ্লোরিডার বোর্ড অব গভর্নরস-এর সভায় জনসনের নিয়োগের বিষয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে, ফ্যামু বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বৈঠকে ৮-৪ ভোটে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইরা বিভিন্নভাবে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু বোর্ডের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, জনসন গভর্নর ডিসান্তিসের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে পারেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন