বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, এবং এর সাথে সাথে কর্মীদের মধ্যে চাকরি হারানোর একটি নতুন ধরনের ভীতিও দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা (CEO) তাদের কর্মীদের মধ্যে এই ভীতি তৈরি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার করছেন।
মূলত, তাঁরা AI-এর অগ্রগতিকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, যা কর্মীদের মনে এই ধারণা তৈরি করছে যে, অদূর ভবিষ্যতে তাদের চাকরি চলে যেতে পারে।
এই প্রসঙ্গে, অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যান্ডি জ্যাসি কর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখা একটি নোটে (memo) AI-এর বিভিন্ন উন্নতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, AI তাদের ভার্চুয়াল সহকারী অ্যালেক্সাকে আরও উন্নত করছে এবং গ্রাহক পরিষেবা চ্যাটবটকে আরও কার্যকরী করে তুলছে।
তবে, আলোচনার মূল বিষয় ছিল অন্য কিছু। জ্যাসি কর্মীদের জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই, সম্ভবত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে, AI-এর কারণে অ্যামাজনের কিছু কর্মীর চাকরি চলে যেতে পারে। তিনি সরাসরি না জানালেও, ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এর ফলে কোম্পানির কর্মী সংখ্যা হ্রাস পাবে।
শুধু অ্যামাজন নয়, অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিও একই ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যানথ্রপিক (Anthropic) নামক একটি AI স্টার্টআপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দারিও অ্যামোডি সিএনএন এবং অ্যাক্সিওসকে (Axios) বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে AI-এর কারণে সম্ভবত অর্ধেক জুনিয়র স্তরের শ্বেত-কাজের (white-collar) চাকরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
তবে, সব প্রযুক্তিবিদ এই বিষয়ে একমত নন। এনভিদিয়ার (Nvidia) জেনসেন হুয়াং এবং গুগল ডিপমাইন্ডের (Google Deepmind) ডেমিস হাস্যাবিস অ্যামোডির এই চরম পূর্বাভাসের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতেই পারে, কিন্তু AI-এর কারণে চাকরি চলে যাওয়ার এই ধারণা কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। অতীতেও, বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যেমন ইমেল, স্ল্যাক, টিমসের (Teams) মতো প্ল্যাটফর্মগুলি এসেছে এবং কর্মক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন এনেছে।
এর ফলে কর্মীদের কাজের স্বাধীনতা বেড়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজের সময়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাইক্রোসফটের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কর্মীদের কাজের চাপ বেড়েছে। কর্মীদের প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭৫টি নোটিফিকেশন, ১১৭টি ইমেল এবং কাজের বাইরের সময়েও ৫৮টি বার্তা আদান-প্রদান করতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিকে উন্নত করতে, মাইক্রোসফটও তাদের কর্মক্ষেত্রে AI ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।
মোটকথা, প্রযুক্তি ব্যবহারের এই প্রবণতা একদিকে যেমন কর্মীর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, তেমনি কর্মীদের মধ্যে চাকরি হারানোর ভয়ও তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন