সাগরের গভীরে লুকিয়ে থাকা তারা মাছ: কিছু মজাদার তথ্য
সাগর আমাদের পৃথিবীর বিশাল এক রহস্যময় ভান্ডার। আর এই সাগরের বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি প্রাণী হল তারা মাছ (Starfish)।
তারা মাছ দেখতে অনেকটা তারার মতো, তাই এদের এই নামে ডাকা হয়। কিন্তু এদের সম্পর্কে এমন অনেক অজানা তথ্য রয়েছে যা হয়তো অনেকেই জানেন না।
আসুন, আজ আমরা তারা মাছ সম্পর্কে কিছু মজাদার তথ্য জেনে নিই:
তারা মাছ দেখতে সুন্দর হলেও, এদের শরীর সত্যিই অনেক বিশেষত্বে ভরা।
১. মস্তিষ্কহীন তারা মাছ: তারা মাছের কোনো মস্তিষ্ক নেই! এদের স্নায়ুতন্ত্র সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকে।
প্রতিটি বাহু (arm) স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তবে তারা একে অপরের সাথে সমন্বয় করে চলে।
২. রক্তের বদলে সমুদ্রের জল: তারা মাছের শরীরে রক্তের পরিবর্তে সমুদ্রের জল প্রবাহিত হয়। এদের দেহে একটি বিশেষ ছিদ্র থাকে যেটাকে ‘মাদ্রেপোরিট’ (madreporite) বলা হয়।
এই ছিদ্রের মাধ্যমে জল তাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
৩. অঙ্গ পুনরুৎপাদন ক্ষমতা: তারা মাছের একটি বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে – সেটি হলো অঙ্গ পুনরুৎপাদন। কোনো কারণে এদের কোনো বাহু ছিঁড়ে গেলে, সেটি পুনরায় গজাতে পারে।
এমনকি কিছু তারা মাছ তাদের বাহু থেকে নতুন তারা মাছ তৈরি করতে পারে!
৪. তারা মাছ, আসলে মাছ নয়: তারা মাছ ‘অ্যাস্টেরোডিয়া’ (Asteroidea) শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, যা কিনা ‘একিনোডার্মাটা’ (Echinodermata) পর্বের একটি অংশ।
এদের সঙ্গে আরও কিছু সামুদ্রিক প্রাণী, যেমন – সমুদ্র শশা, সামুদ্রিক আর্চিন এদের দেখা যায়।
আসল মাছের মতো তাদের কানকো, আঁশ বা পাখনা নেই।
৫. বাহু থেকে প্রজনন: কিছু তারা মাছ তাদের বাহু কেটে বংশবৃদ্ধি করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘লিন্কিয়া মাল্টিফরা’ (Linckia multifora) নামক তারা মাছ একটি বাহু হারালে, সেই বাহু থেকে নতুন তারা মাছ জন্মায়।
এদের এই অঙ্গকে ‘ধূমকেতু’ (comet) বলা হয় এবং এটি প্রায় দশ মাসের মধ্যে একটি নতুন তারা মাছে পরিণত হতে পারে।
৬. বহিঃকোষীয় পরিপাক: তারা মাছ শিকার করার জন্য তাদের পাকস্থলী দেহের বাইরে বের করে আনে।
এরপর তারা শিকারের নরম অংশ হজম করে এবং পুষ্টি গ্রহণ করে।
৭. বাহুর ডগায় চোখ: তারা মাছের বাহুগুলির ডগায় ‘আইস্পট’ (eyespot) নামক এক ধরনের চোখ থাকে।
এই চোখ তাদের আলো এবং আশেপাশের বস্তুর উপস্থিতি বুঝতে সাহায্য করে।
৮. আলো ছড়ানো তারা মাছ: গভীর সমুদ্রের কিছু তারা মাছ অন্ধকারে আলো ছড়াতে পারে। ‘এন. আমেরিকানা’ (N. Americana) নামক এক প্রজাতির তারা মাছ পুরো শরীর থেকে আলো বিকিরণ করে।
৯. স্বাদ-গ্রহণের ক্ষমতা সম্পন্ন পদ: তারা মাছ তাদের পায়ের মাধ্যমে চলাচল করে এবং স্বাদ গ্রহণ করে।
এদের পায়ের অসংখ্য ছোট ছোট অঙ্গ আছে, যা ‘টিউব ফিট’ (tube feet) নামে পরিচিত।
১০. বর্জ্য নির্গমন: তারা মাছের বর্জ্য ত্যাগ করার জন্য বিশেষ কোনো অঙ্গ নেই। কিছু তারা মাছ তাদের পায়ের মাধ্যমে বর্জ্য ত্যাগ করে।
১১. অরীয় প্রতিসাম্য (radial symmetry): তারা মাছের শরীর ‘অরীয় প্রতিসাম্য’ (radial symmetry) -যুক্ত, যার মানে হল এদের শরীরের কেন্দ্র থেকে বাহুগুলো চারিদিকে বিস্তৃত থাকে।
সাধারণত এদের পাঁচটি বাহু থাকে, তবে কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে এর বেশিও থাকতে পারে।
১২. পরিবেশের সঙ্গে মানানসই: তারা মাছ বিভিন্ন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তাদের বিভিন্ন রঙের উপস্থিতি শিকারী এবং পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে সাহায্য করে।
১৩. শক্ত চামড়া: তাদের ত্বক শক্ত এবং কাঁটাযুক্ত হয়ে থাকে।
যা তাদের বিভিন্ন শিকারী প্রাণী, যেমন – মাছ, কাঁকড়া এবং সি-অটার থেকে রক্ষা করে।
তারা মাছ সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরা শামুক জাতীয় প্রাণী খেয়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রবাল প্রাচীরকে রক্ষা করে।
আশা করি, তারা মাছ সম্পর্কে এই মজাদার তথ্যগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে।
সমুদ্রের এই সুন্দর প্রাণীগুলো আমাদের পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আসুন, আমরা সবাই মিলে সমুদ্র এবং এর জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সচেতন হই।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure