যুক্তরাজ্যে গর্ভপাতের অধিকারের প্রশ্নে নতুন দিগন্ত, বিপরীত মেরুতে আমেরিকা।
যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা গর্ভবতী নারীদের জন্য গর্ভপাতকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে কোনো নারী গর্ভপাত করালে, তাকে আর ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।
এই সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাত বিষয়ক নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত, যেখানে অধিকার খর্ব করার প্রবণতা বাড়ছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তটি ভিক্টোরিয়ান যুগের একটি আইনের সংশোধনীর অংশ। এই আইনে কোনো নারীর গর্ভপাত ঘটানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো।
যদিও, আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা এখনো বহাল রয়েছে। যেমন, কোনো চিকিৎসক একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে গর্ভপাত ঘটাতে সহায়তা করলে, তিনি আইনের লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বর্তমানে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ২৪ সপ্তাহের বেশি সময়ের গর্ভপাত সাধারণত অবৈধ। তবে, মায়ের জীবন যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, সেক্ষেত্রে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এই নিয়ম শিথিল করা হয়।
যুক্তরাজ্যে গর্ভপাতের বিষয়টি বেশ স্বাভাবিক হলেও, বিদ্যমান বিধিনিষেধের বাইরে কোনো নারী গর্ভপাত করলে, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত, গ্রেপ্তার, বিচার এবং কারাদণ্ডের ঝুঁকি থাকে।
নতুন এই সংশোধনী সেই ঝুঁকিগুলো দূর করবে। আইনটি কার্যকর হতে হলে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে এটি পাস হতে হবে।
বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন নারীদের গর্ভপাতের অধিকার থাকা উচিত। ২০১৯ সাল থেকে চালানো ‘ইউগভ’-এর জরিপে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে করা সর্বশেষ একটি সমীক্ষায় ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা এই অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের বিপরীতে, তাদের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার মারাত্মকভাবে সংকুচিত হচ্ছে। ২০২২ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায় বাতিল করার পর, অনেক রাজ্যে গর্ভপাতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এমনকি, কোনো কোনো রাজ্যে এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে, আমেরিকায় প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পছন্দের ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন এসেছে।
এমএসআই রিপ্রোডাক্টিভ চয়েসেস-এর যুক্তরাজ্য বিষয়ক প্রধান লুইস ম্যাককাডেন মনে করেন, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গর্ভপাত বিরোধী মনোভাবের একটি সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি সিএনএন-কে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্যেও কিছু গর্ভপাত বিরোধী গোষ্ঠী উৎসাহিত হয়েছে এবং ক্লিনিকের বাইরে তাদের তৎপরতা বেড়েছে।
ম্যাককাডেন আরও উল্লেখ করেন, “কদাচিৎ যখন কোনো নারীকে ২৪ সপ্তাহের বেশি সময়ের গর্ভপাত ঘটানোর সন্দেহে পাওয়া যায়, তারা সবাই খুবই অসহায় পরিস্থিতিতে ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন, যারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার, মানব পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন অথবা যাদের গর্ভপাত বা মৃত সন্তান জন্ম হয়েছিল।”
তবে, যুক্তরাজ্যের ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অফ আনবর্ন চিলড্রেন’ মঙ্গলবারকের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে।
সংগঠনটির পাবলিক পলিসি ম্যানেজার, অলিথিয়া উইলিয়ামস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই আইন কার্যকর হলে, যেকোনো সময়ে, এমনকি জন্মের মুহূর্তের আগ পর্যন্ত কোনো নারী যদি গর্ভপাত ঘটান, তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন