যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)-এর সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আপাতত কম। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী বৈঠকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ফেড।
এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনই হয়তো দৃশ্যমান হবে না, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।
ফেডের এই সিদ্ধান্তের কারণ হলো, তারা এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। যদিও এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ২.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
কিন্তু কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই হার আরও কমিয়ে আনতে হবে। তাছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক আরোপের নীতিও তাদের উদ্বেগের কারণ।
শুল্ক বাড়ানো হলে তা বাজারে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
ফেডের এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা ঋণ নিতে চান, তাদের জন্য আপাতত সুদের হারে কোনো সুখবর নেই। সাধারণত, ফেড সুদের হার কমালে, ব্যাংকগুলোও তাদের ঋণের সুদ কমিয়ে দেয়।
এর ফলে, গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ, এমনকি ক্রেডিট কার্ডের খরচও কমে আসে। কিন্তু ফেড যদি সুদের হার অপরিবর্তিত রাখে, তাহলে ঋণগ্রহীতারা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
তবে, শুধু ফেডের সিদ্ধান্তই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে না। বাজারের অন্যান্য উপাদান, যেমন – দীর্ঘমেয়াদী সুদের হারও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ফেড স্বল্পমেয়াদী সুদের হার কমালেও, বাজারের কারণে দীর্ঘমেয়াদী সুদের হার একই থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে ফেডের ওপর সুদের হার কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। তিনি ফেড চেয়ারম্যানকে ‘বোকা’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
ট্রাম্পের অভিযোগ, অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন সুদের হার কমাচ্ছে, তখন ফেড কেন তা করছে না। তবে, ফেডের কর্মকর্তাদের বক্তব্য হলো, তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কানাডার ব্যাংক এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ইতোমধ্যে সুদের হার কমিয়েছে। এর মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে তাদের অর্থনীতিতে কিছুটা দুর্বলতা দেখা দিয়েছে।
জাপানের ব্যাংকও সম্প্রতি সুদের হার বাড়িয়েছে, তবে তারা এখনো আগের অবস্থানেই রয়েছে।
ফেডের এই সিদ্ধান্তের ফলে, বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের বাণিজ্য, রেমিট্যান্স এবং টাকার মূল্যের ওপর এর প্রভাব আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বাড়লে, ডলারের দাম বাড়তে পারে, যা আমাদের আমদানি খরচ বাড়িয়ে দেবে। আবার, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
সুতরাং, ফেডের সুদের হার সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নীতিনির্ধারকদের এই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: