মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA) এর তহবিল বিতরণে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টেন নয়েম। নতুন নিয়মানুযায়ী, এখন থেকে এক লক্ষ ডলারের বেশি মূল্যের যেকোনো চুক্তি বা অনুদান অনুমোদনের জন্য সরাসরি তার দপ্তরে পাঠাতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জরুরি ত্রাণ কার্যক্রমে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্য পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশেষ করে যখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যেমন ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মতো দুর্যোগে, তখন এই ধরনের জটিলতা অনেক বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন মৌসুম চলছে, ফলে এফইএমএ কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
তাদের মতে, এই প্রক্রিয়া ত্রাণ কার্যক্রমকে ধীর করে দেবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফইএমএ-র একজন কর্মকর্তা এই পদক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘বিপর্যয়কর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এর ফলে স্থানীয় সংস্থা ও ছোট শহরগুলোতে সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হবে। সাবেক এক এফইএমএ কর্মকর্তা একে ‘বিস্ময়কর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি নয়েম এক অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে নতুন এই নিয়ম ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়েছে, তহবিলের আবেদন জমা দেওয়ার সময় মিশন সম্পর্কিত প্রভাব, অর্থের পরিমাণ, সরবরাহ বা সেবার বর্ণনা, সময়সীমা এবং প্রস্তাবিত পদক্ষেপসহ বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
প্রতিটি পর্যালোচনার জন্য কমপক্ষে পাঁচ দিন সময় লাগবে বলেও জানানো হয়েছে। নিয়মটি এমন একটি সময়ে আনা হয়েছে, যখন এফইএমএ সাধারণত জরুরি অবস্থার জন্য দ্রুত অর্থ সরবরাহ করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, হ্যারিকেন হ্যালেন ও মিলটনের সময় সংস্থাটি এক মাসে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিতরণ করেছে। এখন সেই জরুরি তহবিলের অনুমোদন পেতে নয়েমের অফিসের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে, যা কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, সেক্রেটারি নয়েমের মূল লক্ষ্য হল অপচয়, দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করা এবং বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে, মার্চ মাসে ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের চুক্তি ও অনুদানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের নিয়ম চালু করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক লক্ষ ডলারের বেশি ব্যয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের নিয়ন্ত্রন ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও কঠিন করে তুলবে।
এছাড়াও, এফইএমএ-র কার্যক্রমে নয়েম-এর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা কম। এমন পরিস্থিতিতে, ২০২৫ সালের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের পর এফইএমএ-কে বিলুপ্ত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রাজ্যগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন