মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোম্পানি ইউএস স্টিলের শতভাগ মালিকানা এখন জাপানের নিপ্পন স্টিলের হাতে। এক সময়ের বিশ্বসেরা এই কোম্পানিটি আমেরিকার শিল্প খাতের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ছিল।
সম্প্রতি এই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যদিও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতার কারণে বিষয়টি শুরুতে জটিলতা সৃষ্টি করেছিল।
বিষয়টি এমন সময় চূড়ান্ত হলো, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার বলেছিলেন, তিনি এই চুক্তিটিকে সরাসরি অনুমোদন দেবেন না।
তিনি এটিকে একটি ‘বিনিয়োগ’ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, সম্পূর্ণ মালিকানা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন না। তবে, চূড়ান্ত চুক্তিতে নিপ্পন স্টিল ইউএস স্টিলের পুরোটা কিনে নিলেও, প্রেসিডেন্ট কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করা, কর্মী ছাঁটাই কিংবা কর্মী সংখ্যা কমানোর মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা পাবেন।
চুক্তিটি নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর মেয়াদ শেষের দিকে জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাধা দিয়েছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পও শুরুতে এর বিরোধিতা করেছিলেন। তবে, পরে ট্রাম্প জানান, নিপ্পন স্টিল চুক্তির শর্তাবলী উন্নত করেছে এবং কোম্পানির বিভিন্ন অবকাঠামোতে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যদিও মার্কিন সরকারের সঙ্গে নিপ্পন ও ইউএস স্টিলের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
গত মাসে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি এই চুক্তি অনুমোদন করবেন, যদি: ইউএস স্টিলের আমেরিকান কার্যক্রম ‘ইউএস স্টিল’ নামেই পরিচিত থাকে, এর প্রধান কার্যালয় পিটসবার্গে বহাল থাকে এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কর্মী ছাঁটাই অথবা অন্য কোথাও কাজ সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভেটো দিতে পারেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, এটি নিপ্পন স্টিলের ‘অংশীদারিত্ব’ অথবা ‘বিনিয়োগ’, কোনোভাবেই সম্পূর্ণ মালিকানা হস্তান্তর নয়।
এটা একটা বিনিয়োগ, এবং নিপ্পনের আংশিক মালিকানা থাকবে। তবে এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, অন্যথায় আমি এই চুক্তি করতাম না।
চুক্তিটি অনুমোদনের ঘোষণার কয়েক দিন পর পিটসবার্গের ইউএস স্টিল কারখানায় এক সমাবেশে ট্রাম্প উচ্ছ্বসিত শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, এই চুক্তি তাঁদের জন্য ভালো হবে।
তিনি বলেন, “ওরা বারবার আমাকে রাজি করাতে চেয়েছিল, আর আমি বারবার না বলছিলাম।
কিন্তু শ্রমিকদের জন্য এই চুক্তি দিন দিন আরও ভালো হয়েছে। আমি এর ওপর নজর রাখব। এটা দারুণ হতে যাচ্ছে।”
ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ইউএস স্টিল কমপক্ষে আগামী এক দশক ধরে তাদের পুরনো চুল্লিগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় চালু রাখবে এবং কোনো কর্মী ছাঁটাই বা কাজ অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হবে না।
যদিও স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু কর্মকর্তা এই চুক্তির প্রশংসা করেছেন, ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (ইউএসডব্লিউ) এর বিরোধিতা করে আসছিল।
তারা এক বিবৃতিতে চুক্তির শর্তাবলী এবং সুরক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে।
এমনকি ট্রাম্প ও ভবিষ্যতে অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের ভেটো ক্ষমতা থাকার পরও তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানায়।
ইউনিয়নটির ভাষ্যমতে, “হয়তো ঐতিহাসিক ‘ইউএসএস’ লোগোটি টিকে থাকবে, তবে মনে হচ্ছে এটি একটি ধোঁয়াশা ছাড়া আর কিছু নয়।
এর মাধ্যমে জাপানি একটি কর্পোরেশনের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে ‘আমেরিকান’ নামে ডাকার সুযোগ করে দেওয়া হবে।”
একসময় ইউএস স্টিল ছিল আমেরিকান শিল্প খাতের সাফল্যের প্রতীক।
১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি এবং প্রথম কোম্পানি যা ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যবান ছিল।
এটি বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে আমেরিকার অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য ছিল।
গাড়ি, বিভিন্ন সরঞ্জাম, সেতু এবং আকাশচুম্বী অট্টালিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় ইস্পাত সরবরাহ করা থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ে সহায়তা করা পর্যন্ত, ইউএস স্টিলের অবদান ছিল বিশাল।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কোম্পানিটির ক্রমাগত পতন হতে থাকে।
বর্তমানে এটি আর যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ইস্পাত প্রস্তুতকারকও নয়।
বর্তমানে এখানে ১৪ হাজার কর্মী কাজ করেন, যাদের মধ্যে ১১ হাজার জন ইউএসডব্লিউ-এর সদস্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন