শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয়, শঙ্কার ছায়া বিশ্বজুড়ে
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে, আর এর মারাত্মক ফলস্বরূপ খাদ্য উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের তাপমাত্রা যদি আরও বাড়ে, তাহলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
বিশেষ করে, উন্নত দেশগুলোতে এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শতাব্দীর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা এক মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। ফসলের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কৃষকদের অভিযোজন ক্ষমতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। এই পরিস্থিতিতে, একটি নতুন গবেষণা খাদ্য উৎপাদন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে।
আট বছর ধরে চলা এই গবেষণায় ভুট্টা, সয়াবিন, ধান, গম, কাসাভা এবং জোয়ার সহ মোট ৬টি প্রধান খাদ্যশস্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১২,০০০ এর বেশি অঞ্চলে এই গবেষণা চালানো হয়। এই শস্যগুলো বিশ্বের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ক্যালোরির যোগান দেয়।
গবেষকরা দেখেছেন, কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যেমন – তারা বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করছেন এবং সেচের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য উৎপাদনে যে ক্ষতি হবে, তা সহজে পূরণ করা সম্ভব নয়।
গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন দৈনিক জনপ্রতি ১২০ ক্যালোরি করে কমবে। এর ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে এবং মানুষের খাদ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়লে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভুট্টা, সয়াবিন ও গমের মত গুরুত্বপূর্ণ ফসলগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে। যদি মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অব্যাহত রাখে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের শস্য উৎপাদন অঞ্চলে ভুট্টা উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
এছাড়া, চীন, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গম উৎপাদনও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও কানাডায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। শুধু ধানই এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম, কারণ এটি উষ্ণ রাতের তাপমাত্রা থেকে সুবিধা পেতে পারে।
গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, আর তা হলো, উন্নত দেশগুলো এই পরিবর্তনের শিকার হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ, তুলনামূলকভাবে দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশগুলোতে, যেখানে বর্তমান আবহাওয়ার উপযোগী করে কৃষি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও বেশি অনুভূত হবে।
গবেষকরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে এবং এর সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদন কমানোর এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্তি ব্যবস্থার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কৃষকদের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। এছাড়া, শস্যের উৎপাদন বাড়াতে উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতির ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন