চীনের একটি গভীর কুয়া থেকে উদ্ধার হওয়া করোটি, যা “ড্রাগন ম্যান” নামে পরিচিত, তা মানব বিবর্তন বিষয়ক গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই করোটির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে তারা এর সাথে প্রাচীন মানব প্রজাতি ডেনিসোভানদের (Denisovans) যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।
যদি এই গবেষণা সত্য হয়, তবে এটি হবে জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা ডেনিসোভানদের চেহারা এবং তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে।
১৯৩০-এর দশকে চীনের হারবিন শহরে (Harbin) একজন শ্রমিক একটি সেতু নির্মাণের সময় এই করোটিটি খুঁজে পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি শাসনের কারণে তিনি সেটি একটি কূপে লুকিয়ে রাখেন।
দীর্ঘদিন পর, তাঁর পরিবারের সদস্যরা করোটিটি স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেন। বিজ্ঞানীরা জানান, করোটিটি অন্তত ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বছরের পুরনো।
গবেষকরা প্রথমে করোটি থেকে ডিএনএ (DNA) আহরণের চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতে তেমন সাফল্য আসেনি। পরে, তাঁরা দাঁতের ক্যালকুলাস (dental calculus) থেকে কিছু পরিমাণ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (mitochondrial DNA) সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
এই ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডেনিসোভানদের সঙ্গে এর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা আরও জানান, করোটির হাড় থেকে সংগৃহীত প্রোটিনের বিশ্লেষণও একই ইঙ্গিত দেয়।
ডেনিসোভানরা ছিলো হোমিনিন (hominin) প্রজাতির একটি দল, যারা সম্ভবত নিয়ান্ডারথালদের (Neanderthals) মতোই আদিম মানব প্রজাতি ছিল। তারা প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এই ডেনিসোভানদের সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা খুব কমই তথ্য জানেন, কারণ তাদের জীবাশ্ম (fossil) খুবই কম পাওয়া গেছে। তবে, এই নতুন আবিষ্কারের ফলে ডেনিসোভানদের শারীরিক গঠন কেমন ছিল, সে সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ড্রাগন ম্যানের করোটি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ডেনিসোভানদের ভ্রু দৃঢ় ছিল, তাদের মস্তিষ্ক আধুনিক মানুষের মতোই আকারের ছিল, এবং দাঁতগুলো ছিল বেশ বড়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ড্রাগন ম্যান সম্ভবত ডেনিসোভান প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এটিকে *হোমো লঙ্গি* (Homo longi) নামে নতুন একটি প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এই আবিষ্কার মানব বিবর্তন অধ্যয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা আমাদের প্রাগৈতিহাসিক মানব প্রজাতি সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করবে।
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কার ডেনিসোভানদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে। যদিও কিছু বিজ্ঞানী ডিএনএ নিষ্কাশন পদ্ধতির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তবে সামগ্রিকভাবে, এই আবিষ্কারটি মানব বিবর্তন বিষয়ক গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
তথ্য সূত্র: CNN