প্রাচীন দুর্গ: বিশ্বজুড়ে স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাসাদগুলো শুধু পাথর আর ইটের তৈরি কাঠামো নয়, বরং এগুলো ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। প্রতিটি দুর্গের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোনো না কোনো সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, বীরত্বগাথা, প্রেম কিংবা ষড়যন্ত্রের কাহিনী।
তাই আজও এইসব দুর্গগুলো মানুষের কাছে এক অপার বিস্ময়। আজকের প্রতিবেদনে আমরা বিশ্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দুর্গের কথা তুলে ধরব, যা একইসঙ্গে স্থাপত্যশৈলীর অনন্য উদাহরণ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
জাপানের হimeji Castle: ওসাকা ও কোবের কাছে অবস্থিত এই দুর্গটি জাপানি সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুভ্র এই প্রাসাদটিকে “হোয়াইট হেরন ক্যাসেল” নামেও ডাকা হয়, যা এর স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে।
সপ্তদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গটি জাপানের জাতীয় সম্পদ এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
গ্রিসের রোডস দ্বীপের প্রাসাদ: এজিয়ান সাগরের তীরে অবস্থিত এই দুর্গটি মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের এক চমৎকার উদাহরণ। প্রথমে এটি বাইজেন্টাইন দুর্গ হিসেবে নির্মিত হলেও পরে ক্রুসেডারদের দ্বারা সংস্কার করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালীয়রা এটি তাদের অবকাশ যাপনের স্থান হিসেবে ব্যবহার করত। বর্তমানে এখানে প্রাচীন গ্রিক ও খ্রিস্টীয় যুগের বিভিন্ন নিদর্শনীর প্রদর্শনী হয়।
জার্মানির নিউশভ্যানস্টাইন দুর্গ: জার্মানির বাভারিয়ায় অবস্থিত এই দুর্গটি সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত জার্মান দুর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিং দ্বিতীয় ল্যুডভিগের নির্দেশে নির্মিত এই দুর্গটি ছিল তাঁর স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি, যা রিচার্ড ওয়াগনারের অপেরা এবং মধ্যযুগের রোমান্টিক আদর্শের প্রতীক।
এই দুর্গটি বিভিন্ন চলচ্চিত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে।
স্পেনের আলকাজর ডি সেগোভিয়া: স্পেনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই দুর্গটি ইউরোপের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি প্রাসাদ। একসময় এটি ছিল রাণী ইসাবেলা এবং রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের বাসভবন।
পর্তুগালের পেনা প্রাসাদ: উনিশ শতকের রোমান্টিক আন্দোলনের ফলস্বরূপ সিনট্রা পাহাড়ের উপরে নির্মিত এই প্রাসাদটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক শৈলীর মিশ্রণে তৈরি। এর উজ্জ্বল লাল-হলুদ রঙ এবং আকর্ষণীয় টাওয়ার এটিকে অন্য সব দুর্গের থেকে আলাদা করেছে।
ভারতের আম্বার দুর্গ: রাজস্থানের জয়পুরের কাছে অবস্থিত এই দুর্গটি সপ্তদশ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। দুর্গের অভ্যন্তরে রাজপুত স্থাপত্যের চমৎকার নিদর্শন বিদ্যমান, যা দর্শকদের আজও মুগ্ধ করে।
মরক্কোর কাসার অফ আইট-বেন-হাদডু: সাহারা মরুভূমির প্রান্তে অবস্থিত এই দুর্গটি একাধিক চলচ্চিত্র ও টিভি শো-এর শুটিং লোকেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি মূলত সপ্তদশ শতকে কারওয়ানদের বিশ্রামাগার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।
সুইডেনের কালমার দুর্গ: ভাইকিং যুগের শেষের দিকে নির্মিত এই দুর্গটি বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত। পরবর্তীতে রাজা গুস্তাভ এবং তাঁর পুত্রগণ এটিকে রাজকীয় বাসভবনে পরিণত করেন।
বর্তমানে এটি জাদুঘর এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র।
এছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও অনেক সুন্দর দুর্গ রয়েছে, যেমন – পুয়ের্তো রিকোর ক্যাসিলো সান ফেলিপে দেল মোরো, তুরস্কের টপকাপি প্রাসাদ, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ ক্যাসেল, লুক্সেমবার্গের শ্লস ভায়ান্ডেন, রাশিয়ার নভগোরোদ ডেটিনেটস, ফ্রান্সের শ্যাতো ডি শ্যাম্বোর্ড, জাপানের শুরি-জো ক্যাসেল, ইংল্যান্ডের বোডিয়াম ক্যাসেল, মেক্সিকোর ক্যাসিলো দে চাপুলটেপেক, স্লোভেনিয়ার প্রেডজাম ক্যাসল, ইতালির ক্যাসটেলো আরাগোনস এবং চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ ক্যাসেল উল্লেখযোগ্য।
দুর্গগুলো শুধু নিছক স্থাপত্যকর্ম নয়, বরং এগুলো ইতিহাসের অমূল্য দলিল। প্রতিটি দুর্গের নিজস্ব গল্প আছে, যা আমাদের অতীতকে জানতে এবং বুঝতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন