টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস-এর (Texas Instruments – TI) বিশাল বিনিয়োগ: বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের জন্য কী সম্ভাবনা?
যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী চিপ তৈরির কারখানা স্থাপন করতে টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস (টিআই) ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এই বিশাল বিনিয়োগের ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হবে ৬০,০০০-এর বেশি কর্মসংস্থান।
এই খবরটি বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের গতি প্রকৃতি পরিবর্তনের একটি আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এই বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অত্যাধুনিক চিপ তৈরি করা, যা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার এবং গাড়ির মতো অত্যাবশ্যকীয় প্রযুক্তি পণ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চাইছে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেন তাদের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই করে।
এর ফলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র আরও শক্তিশালী হবে।
টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস-এর এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেমিকন্ডাক্টর খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। কোম্পানিটি অ্যাপল, এনভিডিয়া এবং ফোর্ডের মতো প্রযুক্তি ও গাড়িনি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করে।
এই বিনিয়োগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং উটাহ রাজ্যে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির সাতটি নতুন কারখানা তৈরি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকায় সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন বাড়াতে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। টিআই-এর সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব আগামী কয়েক দশক ধরে মার্কিন চিপ উৎপাদনকে সহায়তা করবে।”
এই ঘটনা প্রমাণ করে, বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের গুরুত্ব বাড়ছে। বর্তমানে, উন্নত দেশগুলো এই খাতে নিজেদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
যদিও এই বিনিয়োগ সরাসরি বাংলাদেশের জন্য নয়, তবে এর কিছু প্রভাব অবশ্যই আমাদের দেশেও পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব বাজারে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের সরবরাহ এবং মূল্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের বাজারেও স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দামের তারতম্য হতে পারে।
একইসঙ্গে, উন্নত প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বাড়লে, তা বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীনও প্রযুক্তি খাতে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে চাইছে। সম্প্রতি, চীনের একটি স্টার্টআপ, ডিপসিক (DeepSeek) একটি শক্তিশালী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) মডেল তৈরি করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো এআই-এর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং তারা এই অবস্থান ধরে রাখতে চায়।
সব মিলিয়ে, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস-এর এই বিনিয়োগ বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এই খবরের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা জরুরি।
এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বৈশ্বিক বাজারের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে, তেমনি দেশের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতেও সুবিধা হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন