ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে প্রায় ৯ কোটি ডলারের ক্রিপ্টো চুরি, ইসরায়েলি হ্যাকারদের দায় স্বীকার।
সম্প্রতি, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাইবার জগতের যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ‘নবিট্যাক্স’ থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি হয়েছে।
একটি পরিচিত ইসরায়েলি হ্যাকিং গ্রুপ ‘প্রেডাটরি স্প্যারো’ এই সাইবার হামলার দায় স্বীকার করেছে।
হ্যাকাররা তাদের এক বার্তায় জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরান এই এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করছিল।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকাররা সম্ভবত চুরি করা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো এমন ডিজিটাল ওয়ালেটে স্থানান্তর করেছে যেগুলোর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
নবিট্যাক্স তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা তাদের এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।
ক্রিপ্টো ট্র্যাকিং সংস্থা ‘এলিফটিক’ এবং ‘টিআরএম ল্যাবস’ নিশ্চিত করেছে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি হয়েছে এবং তা নির্দিষ্ট কিছু ‘ওয়ালেট’-এ পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার কয়েক দিন আগে, ‘প্রেডাটরি স্প্যারো’ ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সেপাহ-এর ডেটা ধ্বংস করার দাবি করে।
তাদের দাবি, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর সদস্যরা ব্যাংকের পরিষেবা ব্যবহার করত।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ফারস নিউজ এজেন্সি গ্যাস স্টেশনে ব্যাংকের পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
তেহরানের একটি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ও বুধবার তারা প্রায় ১০টি এটিএম বুথে গিয়ে নগদ টাকার সংকট দেখতে পান।
এই ঘটনাগুলি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সাইবার যুদ্ধের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
যেখানে দু’পক্ষই—অথবা তাদের সমর্থকরা—কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি এবং ডেটা ধ্বংসের মতো হামলা চালিয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘প্রেডাটরি স্প্যারো’ সম্ভবত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
হ্যাকিং গ্রুপটি অতীতে ইরানের একটি ইস্পাত কারখানা এবং গ্যাস স্টেশনে পেমেন্ট ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হামিদ কাশফি বলেছেন, ‘প্রেডাটরি স্প্যারো’-র এই হামলা সাধারণ ইরানিদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং আর্থিক সংস্থান কমে যাওয়ার কারণে অনেক ইরানি ক্রিপ্টোর ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি, উভয় দেশেই আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা চলছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলিরা কর্তৃপক্ষের ভুয়া বার্তা পেয়েছে, যেখানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে অনিরাপদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরান সরকার নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছে, কারণ তাদের আশঙ্কা, ইসরায়েল এই প্ল্যাটফর্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।
তবে, হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের বার্তা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড (end-to-end encrypted) বলেও জানিয়েছে।
৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকার সমান।
দেশের কোনো বড় উন্নয়ন প্রকল্পের সমপরিমাণ অর্থ এভাবে চুরি হওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় এই ধরনের দুর্বলতা ভবিষ্যতে আরও বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন