মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা থেকে মুক্তি লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো জুনটিন্থ। এই দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয় টেক্সাসের গ্যালভেস্টন শহরে, যেখানে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার দুই বছর পর দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পান সেখানকার আফ্রিকান-আমেরিকানরা।
জুনটিন্থ উদযাপন এখন শুধু একটি স্থানীয় উৎসব নয়, বরং এটি স্বাধীনতা এবং আত্ম-পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে সারা আমেরিকাজুড়ে পালিত হয়। এই দিনে পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের একত্রিত হয়ে আনন্দ করা হয়, গান-বাজনা ও নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়।
জুনটিন্থ উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হলো খাদ্য। এই দিনের খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গভীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বারবিকিউ বা গ্রিল করা মাংস, যা বাঙ্গালীদের কাছেও খুবই পরিচিত, এই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মাংস রান্নার এই বিশেষ পদ্ধতিটি, যা আমেরিকান সংস্কৃতির একটি অংশ, এই দিনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শূকরের মাংস, মুরগি এবং বিভিন্ন ধরনের মশলাদার খাবার তৈরি করা হয়। এই মাংস রান্নার পদ্ধতি আফ্রিকান-আমেরিকানদের সংস্কৃতিতে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
এছাড়াও, তরমুজ, স্ট্রবেরি এবং আরও বিভিন্ন ধরনের লাল রঙের খাবার এই দিনের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। লাল রঙ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় হওয়া রক্তক্ষরণের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
জুনটিন্থের খাবারের তালিকায় লাল রঙের প্রাধান্য দেখা যায়। এর কারণ হলো, লাল রং শুধু সংগ্রামের প্রতীক নয়, এটি আফ্রিকান সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নাইজেরিয়া, বেনিন, টোগো এবং কঙ্গোসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতিতে লাল রঙের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
এই অঞ্চলের মানুষজন একসময় দাসত্বের শিকার হয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ হলো এই লাল রঙের ব্যবহার, যা আজও জুনটিন্থের খাবারে দেখা যায়।
ঐতিহ্যগতভাবে, এই দিনের খাবারগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরিবারের সদস্যরা তৈরি করে আসছেন। টমি বুদরো, যিনি গ্যালভেস্টন ঐতিহাসিক ফাউন্ডেশনের আফ্রিকান আমেরিকান ঐতিহ্য কমিটির সদস্য, তিনি বলেন, “এই খাবারগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া, যা আমরা তাদের কাছ থেকে শিখেছি এবং অনুসরণ করি।”
পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা তাদের রান্নার কৌশলগুলো অন্যদের শিখিয়ে থাকেন, যা এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
জুনটিন্থ মূলত একটি উৎসব, যেখানে পরিবার ও বন্ধুদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এটি শুধু একটি দিনের উদযাপন নয়, বরং এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ভালোবাসার একটি উদযাপন। খাবারের মাধ্যমে মানুষজন তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং এই আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক