মেক্সিকোর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় এরিক, যা বর্তমানে ‘চরম বিপদজনক’ ক্যাটাগরি ৪ মাত্রায় অবস্থান করছে। এর ফলে ঐ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (National Hurricane Center) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকালে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে ঐ অঞ্চলে ব্যাপক ঝড়ো হাওয়া, আকস্মিক বন্যা এবং জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এরিকের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৪৫ মাইল, যা ঘণ্টায় প্রায় ২৩৩ কিলোমিটারের সমান। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে মেক্সিকোর পুয়ের্তো অ্যাঞ্জেল থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং পুন্টা মালডোনাডো থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে।
এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ক্যাটাগরি ৪-এ উন্নীত হওয়ায় এর ধ্বংস ক্ষমতা আরও বাড়বে। এই ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৫৬ মাইলের মধ্যে থাকে।
এরিক আঘাত হানলে ঐ অঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ বিবেচনায় নিয়ে মেক্সিকোর সরকার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে।
এরই মধ্যে ঐ অঞ্চলের স্কুল, কলেজ ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি বিভাগের কর্মীরা উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি ওaxaca এবং Guerrero রাজ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে প্রায় ১৬ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও, চিয়াপাস, মিশোকান, কলিমা এবং জালিস্কো রাজ্যেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ওটিসের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে আকাপুলকো শহর। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে সেখানকার বাসিন্দারা এবার এরিকের মোকাবিলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
অনেকে তাদের বাড়িঘর নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং খাদ্য ও জরুরি সামগ্রী মজুত করছেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাম এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে এবং জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঘূর্ণিঝড় একটি পরিচিত দুর্যোগ। অতীতে বহুবার ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
মেক্সিকোতে আঘাত হানতে যাওয়া এরিকের পরিস্থিতি আমাদের দেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি এবং সচেতনতা যে অত্যন্ত জরুরি, তা এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস