থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ফাঁস হওয়া ফোনালাপের জেরে টালমাটাল পরিস্থিতি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্যােতংতার্ন শিনাওয়াত্রা এবং কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের মধ্যেকার একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার জেরে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান বিতর্কের মধ্যেই এই ফোনালাপের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, যা বর্তমানে দেশটির রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী প্যােতংতার্নকে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘কাকা’ সম্বোধন করতে শোনা যায়। এছাড়াও, সীমান্তে সংঘর্ষের পর বিধিনিষেধ শিথিল করা উচিত কিনা, তা নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সবচেয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, থাই সেনাবাহিনীর এক কমান্ডারকে ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করার কারণে। সমালোচকরা বলছেন, প্যােতংতার্ন হুন সেনকে খুশি করতে গিয়ে থাইল্যান্ডকে দুর্বল প্রমাণ করেছেন।
ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর, প্রধান জোটসঙ্গী ভূমিজাই থাই পার্টি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফোনালাপটি থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, এবং সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব ফেলেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি না করলেও, এই ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করা হয়েছে।
এই ঘটনার জেরে বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে সমবেত হয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেয়। এমনকি, কয়েকজন সংসদ সদস্য তাকে অভিশংসিত করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার জেরে থাইল্যান্ডে সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বাড়ছে। অতীতেও থাইল্যান্ডে সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস রয়েছে। প্যােতংতার্নের বাবা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা ২০০৬ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এছাড়া, তার বোন ইংলাক শিনাওয়াত্রা, যিনি ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কম্বোডিয়ার কাছে একটি প্রতিবাদপত্র জমা দিয়েছে। তারা এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী এবং প্রতিবেশীসুলভ আচরণের বিপরীত বলে উল্লেখ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। জোট সরকার টিকে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের পাশাপাশি সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দেশটির গণতন্ত্রের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস