শিরোনাম: আমেরিকায় রূপান্তরকামীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত রায়ে বিভক্ত সুপ্রিম কোর্ট, প্রভাব বিশ্বজুড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ১৮ বছরের কম বয়সী রূপান্তরকামী (ট্রান্সজেন্ডার) শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত একটি আইনের বৈধতা বহাল রেখেছে। এই আইনটি টেনেসিতে কার্যকর করা হয়েছে, যেখানে হরমোন থেরাপি এবং বয়ঃসন্ধি-রোধকারী ওষুধ ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এই রায়ের পক্ষে থাকলেও, এর প্রভাব সীমিত রাখতে চেষ্টা করেছেন, যা বিতর্কটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই রায়ের মূল বিষয় হলো, টেনেসির আইনটি শিশুদের জন্য হরমোন চিকিৎসা এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। আদালত এই যুক্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে, এই ধরনের বিধিনিষেধ শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন।
তবে, প্রধান বিচারপতি রবার্টস এই রায়ের মাধ্যমে রূপান্তরকামীদের অধিকারের ওপর বৃহত্তর প্রভাব ফেলতে চাননি। তিনি এই বিষয়ে রক্ষণশীল বিচারপতিদের কিছু চরমপন্থী ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যা ভবিষ্যতে রূপান্তরকামীদের প্রতি বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারতো।
বিচারপতিদের মধ্যে এই রায় নিয়ে ভিন্নমত দেখা গেছে। উদারপন্থী বিচারকেরা এই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে, এই রায় রূপান্তরকামী শিশুদের অধিকারকে খর্ব করে এবং তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করে।
তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে রূপান্তরকামীদের প্রতি আরও বেশি বৈষম্য তৈরি করবে।
অন্যদিকে, কিছু রক্ষণশীল বিচারপতি এই রায়ের পক্ষে তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি হলো, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তাঁরা মনে করেন, রূপান্তরকামীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে আরও কঠোর নিয়ম-কানুন থাকা প্রয়োজন।
এই রায়ের ফলে, রূপান্তরকামীদের অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে, এই রায়ের পর ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরনের আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। কারণ, রূপান্তরকামীদের অধিকার এবং তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
এই রায়ের মাধ্যমে অন্যান্য দেশও তাঁদের নিজস্ব আইন ও নীতির ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে।
এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি রবার্টস একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “সংবিধান এই প্রশ্নটি জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে, কোনো ডাক্তারের হাতে নয়।” তাঁর এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি মনে করেন, রূপান্তরকামীদের অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতাদের মুখ্য ভূমিকা পালন করা উচিত।
বর্তমানে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই রায়ের সুযোগ নিয়ে রূপান্তরকামী সামরিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে, রূপান্তরকামীদের সমর্থনকারী স্কুল ও অলাভজনক সংস্থাগুলোর তহবিল বন্ধ করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই রায়ের ফলে, রূপান্তরকামীদের অধিকারকর্মীরা হতাশ হয়েছেন। তাঁদের মতে, এই রায় তাঁদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তবে, তাঁরা তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হলো, রূপান্তরকামীদের প্রতি বৈষম্য দূর করা এবং তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করা।
তথ্য সূত্র: CNN