পালিয়েও বেশি দূর যাওয়া যায় না, অনেক সময় ধরা পড়ে যেতে হয় আসামীদের। অপরাধ করে আত্মগোপন করার পরেও কেন তারা প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে? সম্প্রতি ঘটা কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ঘটা কয়েকটি ঘটনার দিকে যদি তাকানো যায়, তবে দেখা যায়, অপরাধীরা পালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত নিজেদের পরিচিত এলাকাতেই ধরা পড়েছে। যেমন, মিনেসোটায় দুইজন আইনপ্রণেতা ও তাদের সঙ্গীদের গুলি করার অভিযোগে অভিযুক্ত ভান্স বোয়েল্টারকে তার বাড়ি থেকে মাত্র এক মাইল দূরের একটি জঙ্গল থেকে খুঁজে বের করা হয়।
নিউ অরলিন্সের জেল থেকে পালানো ১০ জন কয়েদীর মধ্যে অর্ধেকের বেশিকে শহরের মধ্যেই ধরা হয়। এমনকি, মে মাসে জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া আরকানসাসের এক প্রাক্তন পুলিশ প্রধানকেও কারাগার থেকে দেড় মাইলেরও কম দূরত্বে পাওয়া যায়।
আসলে, আত্মগোপন করার কোনো নিশ্চিত কৌশল নেই। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্যমতে, কিছু বিষয় পলাতকদের ধরা পড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। যেমন- আগে থেকে পরিকল্পনা করার ক্ষমতা, আর্থিক সঙ্গতি এবং বন্য পরিবেশে টিকে থাকার মতো দক্ষতা।
প্রথমত, অপরাধীরা সাধারণত পরিচিত এলাকাতেই থাকতে চায়। এর প্রধান কারণ হলো, তারা ওই এলাকার মানুষ ও ভৌগোলিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত থাকে। তাছাড়া, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের মতো যারা তাদের পালাতে সাহায্য করতে পারে, তাদের কাছাকাছি থাকারও একটা প্রবণতা থাকে। কিন্তু, পরিচিত স্থানে থাকার একটি বড় সমস্যা হলো, তদন্তকারীরা সবার আগে সেই এলাকাতেই তাদের খোঁজ করেন।
দ্বিতীয়ত, অনেক সময় দেখা যায়, পালানোর জন্য আসামীর তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে না। দ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে না পারার কারণে তারা প্রায়ই ধরা পড়ে যায়। তাছাড়া, পালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবও একটি বড় বাধা। ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করা, যা সিনেমায় দেখানো হয়, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। এমনকি, সহজে শনাক্ত করা যায় না এমন একটি গাড়ি সংগ্রহ করতেও অনেক টাকার প্রয়োজন হয়।
তৃতীয়ত, ধরা পড়ার আরেকটি কারণ হলো, আত্মগোপনকারীরা সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছবি ও পরিচয় গণমাধ্যমে প্রচার করার কারণে, তারা সব সময় আতঙ্কে থাকে। ফলে, তারা এমন কোনো কাজ করতে চায় না, যা তাদের শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
বনের গভীরে লুকিয়ে থাকা কি সফল হওয়ার কৌশল? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর উত্তর নির্ভর করে বন্য পরিবেশে টিকে থাকার অভিজ্ঞতার ওপর। বনের আশেপাশে যারা বসবাস করে, অথবা যারা ওই এলাকার সঙ্গে পরিচিত, তারা হয়তো সেখানে বেশ কিছুদিন লুকিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু, প্রস্তুতি না থাকলে বেশি দিন বনের মতো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা কঠিন।
সবশেষে, আত্মগোপনকারীদের মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়। অপরাধ করে পালানো কঠিন, আর ধরা পড়লে তার পরিণতি আরও ভয়াবহ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন