২১ বছর বয়সে দেশ ছাড়লেন তালিয়া স্ক্রাইবার। তারপর থেকে প্রতি রাতে থাকছেন নতুন কোনো অচেনা ঠিকানায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার তরুণী তালিয়া স্ক্রাইবার, যিনি নিজেকে একজন ‘ভ্রমণপিপাসু’ হিসেবে পরিচয় দেন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর প্রচলিত পথে ক্যারিয়ার গড়ার পরিবর্তে বেছে নিয়েছেন এক ব্যতিক্রমী জীবন। বন্ধুদের চিরাচরিত জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে, তিনি একটি ব্যাগ হাতে একাই বেরিয়ে পড়েন বিশ্ব ভ্রমণে, আর তারপর থেকেই তিনি আর ফিরে তাকাননি।
গত তিন মাসে তিনি পাঁচটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। একা ভ্রমণের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন বছর পড়াশোনা করেছেন। তালিয়ার মতে, ক্লাসরুমের পাঠ্যক্রমের চেয়ে জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে অনেক বেশি শিক্ষা দিয়েছে।
১৮ বছর বয়সে মেক্সিকোতে এক তরুণীর একা ভ্রমণের একটি টিকটক ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন তালিয়া। তখনই তিনি একাই বিশ্ব ভ্রমণে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কিভাবে শুরু করবেন, সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না।
তালিয়া বলেন, “আমার আশেপাশে এমন কেউ ছিল না, যে একা ভ্রমণ করেছে। আমি জানতাম না হোস্টেল কি? গুগল ফ্লাইটে বিমানের টিকিট দেখেছি এবং দাম অনেক কম ছিল, তাই স্প্রিং ব্রেকের ছুটিতে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলাম।”
এরপর শুরু হয় তার প্রথম একক ভ্রমণ। মেক্সিকোর পুয়ের্তো এস্কাডিয়োতে, একটা সুটকেস নিয়ে হোস্টেলে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন ভ্রমণের আসল মজা। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছুটি তিনি কাজে লাগিয়েছেন ভ্রমণের জন্য। তিনি বলেন, “গন্তব্য কোথায়, সেটা আমার কাছে মুখ্য ছিল না, আমি শুধু সবচেয়ে সস্তার টিকিট খুঁজতাম।”
অর্থনীতির ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও, তালিয়া ভ্রমণের খরচ জোগাতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। কুকুর হাঁটা, বাড়ি পরিষ্কার করা, এমনকি আবর্জনা পরিষ্কারের মতো কাজও করেছেন তিনি।
ফেব্রুয়ারিতে তিনি পূর্ণ সময়ের জন্য ভ্রমণে বের হন। প্রথমে ব্রাজিল, এরপর কলম্বিয়া, তারপর ইংল্যান্ড, মরক্কো, আফ্রিকার উপকূলের একটি দ্বীপ মাদেইরা হয়ে পর্তুগালে পৌঁছান তিনি।
পর্তুগালের পোর্তো শহরে বসে তিনি জানান, “আমি খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছি। এক একটি স্থানে সর্বোচ্চ কয়েক সপ্তাহ থাকছি।”
একজন ২১ বছর বয়সী তরুণীর ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানতে চান। কিভাবে এতগুলো দেশে একা ঘোরাঘুরি করা সম্ভব?
“আমার সুযোগ ছিল, আমি সেটাকে কাজে লাগিয়েছি। তবে আমার মনে হয়, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।” – যোগ করেন তালিয়া। তার মতে, “অনেকে মনে করে, এমন জীবন যাপন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন, কিন্তু আমি খুব বেশি খরচ করি না।”
ভ্রমণের ধারণাটা অনেকের কাছেই বিলাসবহুল মনে হতে পারে, কিন্তু একা রাস্তায় থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন। বর্তমানে ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে প্রায় পাঁচ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে তার।
বর্তমানে তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তিনি সবসময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যান। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্র সৈকতে, জঙ্গলে, এমনকি বিমানবন্দরের মেঝেতেও তাকে ঘুমাতে হয়েছে।
গত তিন মাসে সবচেয়ে অদ্ভুত কোথায় ঘুমিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, পর্তুগালের সমুদ্র সৈকতগুলোতে, যেখানে হোস্টেলের খরচ অনেক বেশি ছিল, সেখানে ঘুমিয়েছেন। এছাড়াও, ইকুয়েডরের আমাজন জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটিয়েছেন তিনি।
ভ্রমণের সময় রাতে থাকার জায়গা খুঁজে বের করার জন্য তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন – রাতের বেলা বাসের সিটে ঘুমিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো। এছাড়া, ইউরোপে ‘কাউচ সার্ফিং’-এর মাধ্যমে বিনামূল্যে থাকার জায়গা খুঁজে নেন তিনি।
গড়ে, তিনি প্রতি মাসে প্রায় ৮৯৮ মার্কিন ডলার খরচ করেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৯ হাজার টাকার সমান। তিনি সবসময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন।
তালিয়া আরও জানান, ভ্রমণের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে তার দারুণ বন্ধুত্ব হয়। তিনি বিনামূল্যে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছেন।
ভ্রমণে নারীদের নিরাপত্তা সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তালিয়া বলেন, “আমি জীবনকে ভালোবাসি, বাঁচতে চাই। তবে আমি ভয়কে আমার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে দিই না। আমি আমার প্রবৃত্তি অনুসরণ করি এবং পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছি।”
ভ্রমণের কারণে মানুষের প্রতি তার আস্থা বেড়েছে। তিনি মনে করেন, “যদি আমি ঘরে বসে থাকতাম, তবে হয়তো বিশ্বের সুন্দর দিকগুলো দেখতে পেতাম না।”
বর্তমানে তিনি একজন সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ‘গো গ্রানোলা’ নামে একটি ভ্রমণ ব্যবসার মালিক।
ভবিষ্যতে কোথায় স্থায়ী হবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তালিয়া জানান, “আমি এখনো এমন একটি জায়গা খুঁজছি, যেখানে নিজেকে বাড়ির মতো অনুভব করতে পারি। হয়তো একদিন ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে যাব, তবে এখনই তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই।”
তথ্য সূত্র: পিপল